১ লাখ ২০ হাজার টাকা মা-মেয়ের লাশের দাম!
খাগড়াছড়ির রামগড়ে রোববার বালু পরিবহনকারী ট্রাকের চাপায় নিহত হয় মা ও তার ১ বছরের মেয়ে। পিচঢালা রাস্তায় ছিন্নভিন্ন দেহ নিয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় মায়ের। অথচ এ ঘটনায় চালকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। বরং ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে সমঝোতা হয় নিহতের পরিবার ও ট্রাক মালিকের মাঝে।
নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বালু পরিবহনকারী ট্রাক ও চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন চালক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জনপরিসরে চলছে তীব্র সমোলচনা।
জানা গেছে, দুর্ঘটনার রাতেই আপোষের উদ্দেশ্যে ঘাতক ডাম্পার ট্রাকের মালিক হেদায়েত উল্লাহ, প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এবং নিহতের পরিবার বৈঠকে বসে। বৈঠকে নিহত তাসলিমা বেগম ও তার শিশুমেয়ে তানহার পরিবারের পক্ষে নিহতের ভাসুর আলমগীরকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আহত আজিজ উল্যাহ, মমতাজ বেগম ও রওশনারা বেগমকে চিকিৎসার জন্য মোট ৭৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে সমঝোতা করেন ট্রাকমালিক।
এ বিষয়ে জানতে নিহত তাসলিমা আক্তারের স্বামী সালেহ আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলা করে কি আর তাদের ফিরে পাবো? তবে তার বড়ভাই আলমগীর ট্রাকমালিকের সাথে কথা বলে দুর্ঘটনার বিষয়ে সমাধান করেছেন বলে জানান।
রামগড়ের পাতাছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম সমঝোতার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহত ও আহতদের পরিবারের সম্মতিতে রোববার রাতেই এ সমঝোতা হয়।
রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, দু’পক্ষের আপোষের কারণে নিহত বা আহতদের কারো অভিযোগ না থাকায় থানায় কোনো মমলা হয়নি।
এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন লাভলু জানান, প্রায় সময় এমন দুর্ঘটনা হয়। বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও প্রশাসনের টনক নড়ে না কখনো। অপেশাদার ও অদক্ষ চালকদের দিয়ে মালিকপক্ষ প্রতিনিয়ত সড়কে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না।
হাবিব আহমেদ নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, এসব দুর্ঘটনা এক প্রকার হত্যাকাণ্ড। জরিমানা দিয়ে আপোষ যেন এক প্রকার আইনে পরিণত হয়েছে। দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ না নিয়ে টাকা দিয়ে সমঝোতা করা মানবতার চরম অবক্ষয়।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার খাগড়াছড়ির রামগড়ের তৈছালাপাড়া এলাকায় বালু পরিবহনকারী ট্রাকের চাপায় ওই মা ও শিশুকন্যা নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় তাদের আরেক সন্তান মোহাম্মদ তানভীর (৭) গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া আরো পাঁচ যাত্রী আহত হন।