সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে ফাহমিদা

0

সবাইকে কাঁদিয়ে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ফাহমিদা কামাল। বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন সার্থক হলো না তার। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় মরণব্যাধি ক্যান্সারের কাছে হার মেনে মারা যান ফাহমিদা। এ সময় তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ফাহমিদার মৃত্যূর খবর ছড়িয়ে পড়লে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় আত্মীয়-স্বজনরা ভিড় করেন ফাহমিদাকে এক নজর দেখতে। এদিকে ফাহমিদাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ফাহমিদার স্বামী মাহমুদুল হাসান। গত ৯ মার্চ ওই হাসপাতালেই বিয়ে হয় দু’প্রেমিক যুগলের। ফাহমিদা মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মুমূর্ষ জেনেও মাহমুদুল হাসান বিয়ে করেন তাকে। মূলত, দীর্ঘ দিন ধরে ফাহমিদাকে তিনি ভালোবাসতেন। ফাহমিদাও তাকে ভালোবাসতেন। অবশেষে বিয়ের মাধ্যমে এ প্রেমের সম্পর্ককে একটি যৌক্তিক পরিণতি দেন তারা। জীবনের শেষ সময়ে স্ত্রী ফাহমিদার জীবন রক্ষার্থে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন স্বামী মাহমুদুল হাসান। তাকে সব সময় দেখা গেছে স্ত্রীর সেবা-শুশ্রুষা করতে। বিয়ের পর তিনি মূলত ওই হাসপাতালেই অবস্থান করছিলেন।

বিয়ের ঠিক ১০ দিন পর সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় স্বামী মাহমুদুল হাসান ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে কাঁদিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফাহমিদা। সোমবার বাদ আছর চর চাক্তাই নতুন মসজিদ প্রাঙ্গনে ফাহমিদার নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ফাহমিদা চট্টগ্রামের চর চাক্তাই এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামাল উদ্দীনের মেয়ে। মাহমুদুল হাসান কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে।

উল্লেখ্য, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ (অনার্স) এমবি এ পাস করা মাহমুদুল হাসানের পরিবার অনেকটা উচ্চবিত্ত। অপরদিকে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ বাকলিয়ার চাকতাইয়ে জন্ম নেয়া ফাহমিদা কামাল ইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছে এবং নর্থ সাউথ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন।

পড়াশোনার সময়ই হাসান ও ফাহমিদার পরিচয় হয়। এরপর তারা ক্রমশ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। হাজারো বাধার মধ্যেও তাদের সম্পর্ক অটুট থাকে। তারা ঠিক করেছিলেন যে তারা বিয়ে করবেন। কিন্তু, তাদের দু’জনেরই ভাগ্য খারাপ। কারণ, ওই সময়ই ফাহমিদার দেহে মরণব্যাধী ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরে যথারীতি চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হন ফাহমিদা। এ সময় ফাহমিদার স্বজনরা বুঝতে পারেন যে তিনি আর বাঁচবেন না। এ সময় ভেঙে পড়েন হাসান।

ফাহমিদার ক্যান্সার ধরা পরার পর সাথে সাথে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার, পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দেন যে ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। এছাড়া তারা ইঙ্গিত দেন যে ফাহমিদার বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। পরে বুকভরা কষ্ট নিয়ে পরিবারের লোকজন ২০ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করায়। সেখানে চলে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে, মৃত্যুযন্ত্রণায় তখন তিনি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিলেন।। ওই সময় ফাহমিদার জন্য নিয়মিত হাসপাতালে আসতেন হাসান। ফাহমিদার প্রেমিক হলেও সমাজের চোখে তিনি পরপুরুষ। ওই বাধা পার হতে তিনি ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চান। মূলত, তিনি বিয়ের মাধ্যমে তাদের এ প্রেমের সম্পর্ককে একটি যৌক্তিক পরিনতি দিতে চাচ্ছিলেন।

হাসান নিজের পরিবারকে দিয়ে প্রস্তাব দেন যে তিনি ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চান। মৃত্যু পথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই হতবাক। হাসানকে বুঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অটল।

অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকেন তিনি হাসানের দিকে। অবশেষে তিনিও রাজি হন। অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়। গত ৯ মার্চ ২০২২ তারিখ বাদ-এশা মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরেন। আক্দ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দু’জন মিলে কেক কাটেন, মালা বদল হয়। খেজুর মিষ্টি খাওয়ানো হয় সবাইকে। তাদের এ বিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে তা ব্যাপক ভাইরাল হয়। এ বিয়ের ঠিক ১০ দিন পর সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান ফাহমিদা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com