অপপ্রচার রুখতে লাইভ প্রোগ্রামে প্রতিবাদ, দাবি সেই রুশ সাংবাদিকের
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘চ্যানেল ওয়ান’-এ যুদ্ধবিরোধী বার্তা দেওয়া নারী সাংবাদিক মেরিনা অভিয়ান্নিকোভা বলেছেন, ‘রুশ গণমাধ্যমে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, আমি তা প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম।’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের ‘দিস উইক’ প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে স্থানীয় সময় রোববার (২০ মার্চ) তিনি এ কথা বলেন। তিনি মস্কো থেকে প্রচারিত চ্যানেল ওয়ানের সম্পাদক। খবর বিবিসির।
মেরিনা অভিয়ান্নিকোভা বলেন, ‘আমি প্রথম থেকে দেখছিলাম, ইউক্রেনে অভিযান নিয়ে রাশিয়ার জনগণের কাছে সরকার মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছিল। তারা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করছিল।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে কী ঘটছে, তা আমি দেখছিলাম। অথচ আমাদের প্রোগ্রামগুলোতে তার উল্টোচিত্র তুলে ধরা হচ্ছিল, যা বাস্তবের সঙ্গে একেবারে ভিন্ন। রাশিয়ার জনগণকে দেখাতে চাই, এটা কেবলমাত্র অপপ্রচার। কেন এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা তুলে ধরতে চাই।’
অভিয়ান্নিকোভা আরও বলেন, ‘প্রথমে আমি মস্কোর রাস্তায় নেমে যুদ্ধের প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিলাম। তবে পরে আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। সিদ্ধান্ত নিই, টেলিভিশনে লাইভ প্রচারের সময় প্রতিবাদ জানাবো। কারণ এটি আরও বেশি অর্থপূর্ণ হবে, বেশি মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যাবে।’
মস্কোর চ্যানেল ওয়ানে গত ১৪ মার্চ সংবাদ পাঠ করছিলেন একজন উপস্থাপিকা। এসময় একটি প্ল্যাকার্ড হাতে তার পেছনে দাঁড়িয়ে যান মেরিনা অভিয়ান্নিকোভা। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি।
ওই প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘যুদ্ধ নয়, লড়াই বন্ধ করো, প্রচারণা বিশ্বাস করবেন না, এখানে আপনাদের মিথ্যা বলছে তারা।’ শুধু প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েই তিনি থেমে যাননি। চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘যুদ্ধ নয়, লড়াই বন্ধ করো।’
এদিকে, এ ঘটনার পর অভিয়ান্নিকোভাকে আটক করা হয়। মস্কোর একটি আদালতে রাশিয়ার প্রতিবাদ আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে ‘প্রশাসনিক অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়। পরে তাকে ৩০ হাজার রুবল (২১৩ ইউরো) জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আদালত থেকে বেরিয়ে ওইদিন মেরিনা অভিয়ান্নিকোভা বলেন, ‘এটা ছিল আমার যুদ্ধবিরোধী সিদ্ধান্ত। আমি নিজে থেকে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। এটা সত্যিই ভয়ানক ছিল।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমাকে টানা ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা আমার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়নি। কোনো আইনি সহায়তার সুযোগ দিতে গড়িমসি করেছে। দুদিন আমি না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। জীবনে সবচেয়ে কষ্টের দিন কেটেছে। দুঃসময়ে আমার পাশে থাকায় বন্ধু ও সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’