তনু হত্যা: ছয় বছরেও অগ্রগতি নেই তদন্তের
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ছয় বছর পার হয়েছে। হত্যা মামলার তদন্ত শুরুর পর এখন পর্যন্ত পাঁচবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে। সর্বশেষ গত বছরের ২১ অক্টোবর হত্যা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর হয়। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তনুর স্বজনরা। বিচার পাবেন কিনা তা নিয়েই এখন তাদের শঙ্কা।
তনুর ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল বলেন, ছয় বছর পার হলেও আমার বোনের খুনিরা ধরা পড়েনি। এরচেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে? দীর্ঘ প্রায় এক বছরের বেশি হবে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। কি হচ্ছে, কি হবে, বিচার পাবো কিনা তা আমরা জানি না।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা মেয়ে হারানোর কষ্ট ভুলতে পারিনি। আর সবাই তদন্তে এসে পুরনো কথােই ঘুরেফিরে জানতে চান। কখন তনু ঘর থেকে বের হলো, কোথায় কোথায় পড়াতে যেতো, কার বাসায় যেতো, এখনও ওরা আগের অবস্থানেই পড়ে আছে। বারবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল ছাড়া মামলার আর কোনও অগ্রগতিরি কথা শুনিনি। আর কতদিন মেয়ের খুনের বিচারের জন্য কাঁদবো জানি না।
মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে মেয়ে হত্যার বিচারের আশায় দিন পার করছি। এ জীবনে বিচার দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না। শুধু ২০ মার্চ আসলে আলোচনা হয়। আর প্রিয় সন্তানের জন্য আমাদের ভেতরটা ছয় বছর ধরে জ্বলছে।
মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআই সদর দফতরের পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের তদন্ত চলমান। কিন্তু আমরা এখনও খুনি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। আশা করছি শিগগিরই তনুর হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনতে পারবো।
এদিকে মেয়ে সোহাগী জাহান তনুর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালনে গত বুধবার কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে গ্রামের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে আসেন বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগমসহ তার স্বজনরা। তনুর আত্মার মাগফেরাত কামনায় কবর জিয়ারত, কোরানখানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
তনু ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাংস্কৃতিক সংগঠন ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সক্রিয় নাট্যকর্মী। তার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে থিয়েটারের মহড়া কক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়েঅজন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করাতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি তনু। পরে অনেক খোঁজ করার পর সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে ঝোঁপের মধ্যে তনুর লাশ পাওয়া যায়। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। পরদিন তার বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে ‘হত্যার আগে’ ‘ধর্ষণ’ শব্দের বদলে ‘মৃত্যুর আগে’ ‘যৌন সংসর্গ’ হয়েছিল উল্লেখ করা হয়। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। স্বজনদের অভিযোগ- নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তিকে বাঁচাতে এমন প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। যেখানে লাশ উদ্ধারের পর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল, সেখানে এমন প্রতিবেদন উদ্দেশ্য প্রণোদিত।