কর্নাটকে হিজাব নিয়ে আতঙ্ক, হিন্দুত্ববাদী ডানপন্থিরা সন্তুষ্ট
ভারতের কর্নাটক হাইকোর্ট শ্রেণিকক্ষে হিজাব নিষিদ্ধ করায় সন্তুষ্ট ডানপন্থি হিন্দুত্ববাদীরা। তারা ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও একই রকমভাবে হিজাব নিষিদ্ধকরণ চান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন। এর ফলে যেসব মুসলিম ছাত্রী ওই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছিলেন, তারা রয়েছেন আতঙ্কে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে কর্নাটকের উদুপি জেলায় একটি স্কুল কর্তৃপক্ষ শ্রেণিকক্ষে হিজাব নিষিদ্ধ করে। এ নিয়ে তুমুল উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি গড়ায় আদালতে। প্রাথমিকভাবে আদালত থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, শ্রেণিকক্ষে হিজাব বা ধর্মীয় পোশাক পরা যাবে না।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার কর্নাটক হাইকোর্ট তার সিদ্ধান্ত জানায়। তাতেও একই কথা বলেন তিন বিচারকের বেঞ্চ। এ রায়কে স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শীর্ষ স্থানীয় কিছু মন্ত্রী। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন। ভারতে স্কুল, কলেজে ইউনিফর্ম ইস্যুতে জাতীয় পর্যায়ের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়টি স্কুলের ওপর ছেড়ে দেয় রাজ্যগুলো। অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার প্রেসিডেন্ট ঋষি ত্রিবেদী বলেছেন, আমরা হিন্দু জাতি। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধর্মীয় পোশাক চাই না আমরা। আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই আমরা। একই সঙ্গে সারাদেশে একই আইন চালু থাকুক এমনটা চাই। তবে হিজাব নিষিদ্ধের বিষয়ে সমালোচকরা বলছেন, মুসলিম সম্প্রদায়কে একপেশে করে ফেলার আরেকটি উপায় এটা। হিন্দু প্রধান ১৩৫ কোটি মানুষের দেশে শতকরা প্রায় ১৩ ভাগই মুসলিম। বিজেপির মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা বলেছেন, তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটে হিজাব নিষিদ্ধের আহŸান জানিয়েছেন। একই বিষয়ে তারা শিগগিরই সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে চিঠি লিখবেন। এ দুটি রাজ্যেই ক্ষমতায় বিজেপি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সেক্রেটারি অশোক রাভাল বলেন, প্রতিরক্ষা, পুলিশ এবং সরকারি অফিসগুলোতে হিজাব অনুমোদিত নয়। তাহলে কেন স্কুল, কলেজে তা থাকবে? এতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন গুজরাটের শিক্ষামন্ত্রী জিতু ভাগানি। তবে রাজ্যের একজন মন্ত্রী এবং আমলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করার তাৎক্ষণিক কোনো পরিকল্পনা নেই। উত্তর প্রদেশে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফিরেছে বিজেপি। সেখানকার কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নতুন প্রশাসন আসবে। তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। হিজাব নিষিদ্ধের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন আয়েশা হাজিরা আলমাস। তিনি এখন বলছেন, হিজাব নিষিদ্ধের রায়ের বিরুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বিবেচনা করছেন তিনি। তার আশঙ্কা, এখন সারাদেশে হিজাব নিষিদ্ধ করা হতে পারে। ১৮ বছর বয়সী আয়েশা বলেছেন, ডিসেম্বরের পরে তিনি আর স্কুলে যাননি। ওই সময় হিজাব পরে মুসলিম মেয়েদের স্কুলে নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। এরপর ফেব্রæয়ারিতে পুরো রাজ্যে হিজাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। কর্নাটকের উদুপি জেলায় আয়েশার বাড়ি। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান হারে মনে হচ্ছে, আমরা এমন এক ভারতে বসবাস করছি, যেখানে নাগরিকদের সমানভাবে দেখা হয় না। আমার নিজের জন্য, আমার বোনদের জন্য, আমার ধর্মের জন্য লড়াই করছি। আমার ভয়, এই একই ধারা পুরো দেশে আরোপ হতে যাচ্ছে। তবে আমার আশা তা হবে না।