উচ্চমূল্যের চাপে পিষ্ট হচ্ছে মানুষ

0

চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আলু, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, বিভিন্ন রকম সবজি, আটা, ডিম, দুধসহ প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্য গত কয়েক মাস ধরে বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। পবিত্র মাহে রমজানের আর মাত্র ১৫ দিন বাকি। এরই মধ্যে গত কিছুদিন ধরে দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়াই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতি বছরই রমজান মাস সামনে রেখে আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে নেয়ার অঘোষিত একটি ঘৃণ্য চেষ্টা চালিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। বাড়তি দামের চাপে দেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।

ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ দুষছেন সিন্ডিকেট ও সরকারের অপর্যাপ্ত পদক্ষেপকে। মন্ত্রীরা কেউ কেউ মনে করছেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার তুলনায় দ্রব্যমূল্য সেভাবে বাড়েনি। তারা বরং বিশ্ববাজারের উচ্চমূল্য ও অস্থিরতাকে প্রধান কারণ মনে করছেন। আর ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন যাবতীয় দায় এই যুদ্ধের ওপর চাপিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই দায় সারছেন।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের বিপণন বিভাগে কাজ করেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মোটামুটি কাটছিল তাদের সংসার। কিন্তু বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে তার। বেতন থেকে একটি অংশ বাবা-মাকে পাঠাতেন। কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তিনি চিন্তা করছেন দ্রব্যমূল্যের এভাবে ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকলে স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামে পাঠিয়ে দেবেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, মাস শেষে যা বেতন পাই তা দিয়ে চলছিল আমাদের। কিন্তু এখন বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। তেলের দাম লিটার ২০০তে ধাক্কা দিয়েছে। বাজারে গেলে সব কেনাকাটা করতে পারি না। অতিরিক্ত চাপে পরিবারেও অশান্তি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামে পাঠিয়ে মেসে উঠবেন তিনি।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে শুধু স্বল্প আয়ের না মধ্যম আয়ের, যাদের বেতন ৫০-৬০ হাজার টাকা তাদেরও নাভিশ্বাস উঠেছে। এর কারণ কোভিডের কারণে অনেকের আয় কমে গেছে। চাকরি হারিয়েছে অনেকেই। এজন্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।
ব্যবসায়ীদের একটি হীন সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সেটা হলো রমজান এলেই তারা সারা বছরের আয় এক মাসে করতে চায়। এজন্য সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।

নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের প্রধান নির্বাহী কামরুজ্জামান বাবলু বলেন, বাংলাদেশে চাল ও গম ছাড়া আর কোনো খাদ্যপণ্য আমদানিতে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি যেসব পণ্য আমদানি করে, সেগুলোও বেসরকারি ডিলারদের মাধ্যমে করা হয়। ফলে ভোগ্যপণ্য আমদানির প্রায় পুরোটাই বেসরকারি খাতের কব্জায়। আবার এদের মধ্যে অল্প কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান আমদানির বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সেজন্য অভিযোগ করা হয়, কিছু বড় আমদানিকারক সিন্ডিকেট বা নিজেদের মধ্যে চক্র করে রেখেছে যাতে অন্য কেউ সেখানে ঢুকতে না পারে। তবে এই সক্ষমতার শক্তি যখন অনেক বেশি হয়ে যায়, তখন তা সমস্যা সৃষ্টি করে। কেননা সরকারের পক্ষেও একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। আর তাই বাজারে দাম ওঠানামায় এসব বড় প্রতিষ্ঠানই মূল নিয়ামক হয়ে ওঠে।

আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে সারা দেশে এক কোটি পরিবারকে কম মূল্যে টিসিবির মাধ্যমে দুই দফায় সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর সরবরাহ করা হবে। এ জন্য বিশেষ কার্ড দেয়া হবে যা দেখিয়ে কার্ডধারীরা নিয়মিত বাজারদরের চেয়ে কম মূল্যে এসব পণ্য কিনতে পারবেন। এজন্য আট বিভাগে টাস্কফোর্সও গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এই ধরনের পদক্ষেপে নিম্ন আয়ের মানুষকে সাময়িকভাবে কিছুটা স্বস্তি দেয়া গেলেও মূল সমস্যার অর্থবহ কোনো সমাধান আসবে না বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com