মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা-যুদ্ধাপরাধে জড়িত: জাতিসংঘ
মিয়ানমার সামরিক বাহিনী নিয়মতান্ত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুদ্ধপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত। দেশটিতে গত বছর সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রথমবার প্রকাশিত সর্বাত্মক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে জাতিসংঘ। খবর রয়টার্সের।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী জনবহুল এলাকায় বিমান হামলা, ভারী অস্ত্র ব্যবহার ও ইচ্ছা করে বেসামরিক লোকদের টার্গেট করে মানুষের জীবনের প্রতি অবহেলা দেখিয়েছে। অনেকের মাথায় গুলি করা হয়েছে, পুড়িয়ে মারা হয়েছে, নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে বা মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ‘অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ’ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা। মানবাধিকার প্রতিবেদন সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘনে মিয়ানমারের জনগণ যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, তা দৃঢ়, ঐক্যবদ্ধ ও শক্ত আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার দাবিদার।
গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। কিন্তু তা মেনে নেয়নি সাধারণ মানুষ। অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় রাস্তা নেমে আসেন তারা। শুরু হয় ব্যাপক সহিংসতা, ধরপাকড়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে, মিয়ানমার জান্তার হাতে এ পর্যন্ত অন্তত দেড় হাজার বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছেন। হামলা-সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা আরও কয়েক হাজার হতে পারে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলায় মিয়ানমারে অন্তত ১১ হাজার ৭৮৭ জনকে আটক করা হয়, যাদের বেশিরভাগ এখনো বন্দি। এছাড়া, বন্দিদশায় মারা গেছেন অন্তত ২৯০ জন। এদের বেশির ভাগেরই মৃত্যুর কারণ ব্যাপক নির্যাতন।
জতিসংঘ জানিয়েছে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার, স্যাটেলাইটের ছবি, বিশ্বাসযোগ্য মাল্টিমিডিয়া ফাইল ও উন্মুক্ত সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে তারা এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সেনারা দেশটির সাগেইং অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়েছে। সেখানে কিছু ভুক্তভোগীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে। কায়াহ রাজ্যে কয়েকজন নারী-শিশুর পোড়া মরদেহ পাওয়া গেছে। অনেকের দাবি, ভুক্তভোগীরা পালাতে গিয়ে ধরা পড়ার পর জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।
এছাড়া বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। ছাদের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করা, মাদকের ইনজেকশন দেওয়া, কয়েকজনকে ধর্ষণসহ ভয়াবহ যৌন নির্যাতন করা হয়েছে।
জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল রয়টার্স। কিন্তু তাতে সাড়া পাওয়া যায়নি।