ইউরোপের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে প্রস্তুত রাশিয়া!
ইউরোপের সঙ্গে জ্বালানি খাত নিয়ে কঠোর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত রাশিয়া। সম্প্রতি রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপিয়ান কো-অপারেশন বিভাগের পরিচালক নিকোলাই কোব্রিনেটস এমনটা জানান। রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে এমন হুমকি দেন রুশ এ কর্মকর্তা। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস।
সাক্ষাত্কালে কোব্রিনেটস বলেন, রাশিয়া একটি বিশ্বস্ত সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিত। জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বিশ্বমানের নিশ্চয়তা দেয় দেশটি। আমরা আমাদের এ মূল্যায়নকে গুরুত্ব দিই। তবে যদি পরিস্থিতির আলোকে এ খাতে কোনো ধরনের কঠোর অবস্থান নেয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটিও নিতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এ ধরনের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো প্রকার লাভবান অবস্থানে পৌঁছতে পারবে না, কারণ আমাদের একটি বৃহৎ নিরাপত্তা সীমা ও শক্ত অনুভূতি রয়েছে।
১১ মার্চ ইউরোপিয়ান কমিশন ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে নিজেদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার প্রস্তাব করে। এর প্রতিক্রিয়ায় এমনটা মন্তব্য করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। সম্প্রতি ফ্রান্সের ভার্সাইতে রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে একত্রিত হন ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা।
ইউক্রেনের রুশ সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান আরো দৃঢ় ও দেশটির আর্থিক খাতকে দুর্বল করতে এ বৈঠকে মিলিত হন ইউরোপীয় নেতারা। এরই মধ্যে চলতি বছর নাগাদ রাশিয়ার গ্যাসের ওপর থেকে নিজেদের নির্ভরশীলতা দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা সাজিয়েছে ইউরোপিয়ান কমিশন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, আলোচনা ব্যতীত কিছু করা হবে না। রাশিয়ার তেল ও গ্যাস খাতের ওপর তাত্ক্ষণিকভাবে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা, অথবা গ্যাজপ্রোমব্যাংককে সুইফট ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বাদ দেয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ এমনটা বলেন। মস্কোর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধ আরোপের ব্যাপারে ইউরোপীয় নেতারা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য রাশিয়ার তেল এবং অন্যান্য পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও আমদানি নিষিদ্ধ করে। ক্রেমলিনের ওপর নিষেধাজ্ঞার চাপ আরো বাড়াতে এমন ব্যবস্থা নেয় দেশ দুটি। এ নিষেধাজ্ঞার পর পরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ তেল ও গ্যাস খাতে নিজেদের নির্ভরতা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়।
ইউরোপে গ্যাসের বাজার আদর্শ ডাচ টাইটেল ট্রান্সফার ফ্যাসিলিটি (টিটিএফ) হাবে ৭ মার্চ প্রতি মেগাওয়াট আওয়ার গ্যাসের দাম দাঁড়িয়েছে ২১২ ইউরো, যা যেকোনো সময়ের সর্বোচ্চে এবং চলতি বছরের শুরুর তুলনায় ২৩০ শতাংশ বেশি। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটের প্ল্যাটস প্রাইস অ্যাসেসমেন্টের দেয়া তথ্যে এমনটা দেখা যায়।
গত গ্রীষ্মে ইউরোপের মজুদাগারগুলোর মাত্র ৭৭ শতাংশ পূর্ণ হয়েছিল। ৮ মার্চের হিসাবে অঞ্চলটিতে গ্যাস মজুদ সুবিধার মাত্র ২৬ শতাংশ পরিপূর্ণ হয়েছিল। গ্যাস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইউরোপের দেয়া তথ্যে এমনটা দেখা যায়।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটের ইএমইএ গ্যাস অ্যানালিটিকসের প্রধান জেমস হাকস্টেপ বলেন, গ্যাসের বৈশ্বিক দাম প্রতিদিন তার নিজের স্বতন্ত্র মূলনীতি থেতে বিচ্যুত হচ্ছে। এটি মূলত ভবিষ্যতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহে অনিশ্চয়তার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর আরো বেশি পরিমাণ নিষেধাজ্ঞা, এসবের প্রতিক্রিয়ায় মস্কোর প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ অথবা ইউক্রেনিয়ান ট্রানজিট অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ ঝুঁকিতে। তবে এখন পর্যন্ত ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক।