রুশ জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইইউতে মতপার্থক্য
ইউরোপের মোট জ্বালানি চাহিদার অধিকাংশই সরবরাহ করে রাশিয়া। সম্প্রতি ইউক্রেনে রুশ সামরিক আগ্রাসনের পর পশ্চিমা দেশগুলোসহ তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক অবরোধ আরোপ করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি চাহিদায় রুশ নির্ভরতা কমিয়ে আনাসহ তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপ। তবে ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক আগ্রাসনের জেরে দেশটি থেকে তেল ও গ্যাস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে একমত হতে পারেনি অধিকাংশ দেশই। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চলমান এ সামরিক অভিযানের ফলে ইউরোপের শীর্ষ গ্যাস সরবরাহকারী দেশ রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে উৎসাহ দিচ্ছে। একই সঙ্গে এক দশকের মধ্যে এ নির্ভরতার হার শূন্যতে নিয়ে আসতে চায় ইউরোপ। গতকাল ফ্রান্সের ভার্সাইতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে রুশনির্ভরতা কমিয়ে আনার এ পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর দুই দিনব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের একটি খসড়া অনুযায়ী ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়া থেকে গ্যাস, তেল ও কয়লা আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে সম্মত হবে বলে জানা যায়। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি বৃদ্ধি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রতিস্থাপন বাড়ানোর মাধ্যমে এ নির্ভরতা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে অঞ্চলটির। তবে ঠিক কবে নাগাদ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে সে সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বলা হয়নি।
সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বরাত দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু দেশ জ্বালানি চাহিদার জন্য রুশনির্ভরতা কমিয়ে আনার সময় ২০৩০ সাল পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। কিছু সদস্যের মতে, এটি ২০২৭ সালের মধ্যেই করা প্রয়োজন, আবার কিছু দেশ তাত্ক্ষণিকভাবে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করতে চাইছে।
ইইউ সদস্যভুক্ত ২৭টি দেশের মোট গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ করে রাশিয়া। এসব দেশে মোট চাহিদার ২৭ শতাংশ তেল ও ৪৬ শতাংশ কয়লার সরবরাহও পূরণ করে রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের পরও ইউরোপীয় দেশগুলোয় স্থিরগতিতে গ্যাস রফতানি অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। তবে রাশিয়ার জ্বালানি তেল আমদানির ওপর পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে জরুরি পরিকল্পনা নিয়েও ইইউ নেতারা আলোচনা করবেন বলে জানা যায়।
ইইউর জ্বালানি নীতিবিষয়ক প্রধান কাদরি সিমসন বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে না, এমনটা আমরা আশা করি না।
সম্প্রতি রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা জোটের নেতৃস্থানীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এমনিতেই দেশটির অভ্যন্তরীণ জ্বালানি চাহিদা রুশ জ্বালানি সরবরাহের ওপর তেমনটা নির্ভরশীল নয়।
অন্যদিকে, জ্বালানির পরিবর্তে রাশিয়ার ব্যাংকিং ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা ও বিমান পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ব্যস্ত ইউরোপীয় অঞ্চল। একই সঙ্গে রাশিয়ায় যেকোনো ধরনের প্রযুক্তি রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপ।
রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হলে ইইউ জোটের ২৭ সদস্যের প্রতিটি দেশের সম্মতি প্রয়োজন। তবে ইইউর এক কর্মকর্তা জানান, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ দেশটি থেকে জ্বালানি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন। দেশটি রাশিয়ার রফতানীকৃত গ্যাসের ১৮ শতাংশের ভোক্তা, একই সঙ্গে জার্মানির আমদানীকৃত তেলের ১১ শতাংশ সরবরাহ করে রাশিয়া। জার্মানির পাশাপাশি হাঙ্গেরিও রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেন, আমরা ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান ও যুদ্ধের প্রতি নিন্দা জানাই, তবে হাঙ্গেরির মানুষ কোনো প্রকার মূল্য দিতে রাজি নয়।