ভার্সিটিতে পড়ি না বলে আমাদের কথা কেউ শোনে না: ধর্ষিতা তরুণীর আক্ষেপ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিন দিনের মাথায় সহপাঠীর ধর্ষক গ্রেপ্তার হওয়ায় আদালতপাড়ায় এসে নিজের মামলা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন এক প্রতিবন্ধী তরুণী।
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের মামলা করা শারীরিক প্রতিবন্ধী এই নারী বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে আসামি ধরতে গাফিলতির অভিযোগ করেন।
ট্রেনে কাটা পড়ে দুই হাত হারানো ২০ বছর বয়সী এই তরুণী গত বছর ২২ মে মো. সজীব (২৫) নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে ঢাকার খিলগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এই নারীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার একটি গ্রামে। খিলগাঁও এলাকায় থাকতেন তিনি।
তিনি বলেন, “বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। এমনকি গ্রেপ্তারের কোনো চেষ্টাও করেনি।
“আমরা গরিব, ভার্সিটিতে পড়ি না। তাই পুলিশ আমাদের কথাও শোনে না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী গত রোববার সন্ধ্যায় শ্যাওড়ায় এক বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে নেমে ধর্ষিত হন। ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মানবাধিকার কর্মী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনীতিকসহ সমাজের বিভিন্ন মহল থেকেও ধর্ষকের গ্রেপ্তার দাবি করা হয়।
আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী মঙ্গলবার বলেন, এই ঘটনাকে অগ্রাধিকারের তালিকায় সবার উপরে রেখেছেন তারা, ধর্ষককে গ্রেপ্তারে পুলিশের সব বিভাগ ‘সর্বোচ্চ আন্তরিকতা’ দিয়ে চেষ্টা করছে।
এর পরদিন মজনু নামে ওই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে সাংবাদিকদের সামনে আনে র্যাব।
তবে মামলা দায়েরের সাত মাসেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন প্রতিবন্ধী ওই তরুণী।
তার মামলায় বলা হয়, ফেইসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে আসামির সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের জেরে গত বছর ২০ মে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে ওই যুবক। এরপর একটি সন্তানও তার গর্ভে আসে। পরে জোর করে ওষুধ খাইয়ে সেই সন্তান নষ্ট করে ওই যুবক।
“পরে বিয়ের জন্য তাকে চাপ দিলে সে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।”
ওই তরুণীকে ধর্ষণ ও গর্ভের সন্তান নষ্টের বিষয়টি পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রেও এসেছে। মামলায় সজীব ছাড়া অন্য কাউকে আসামি করা হয়নি।
ওই তরুণী বৃহস্পতিবার বলেন, তার আইনজীবী কাওসার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে গত বছর বিষয়টি মীমাংসার জন্য আসামির গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার সদর থানার নাতিরপুরের বস্তিতে গিয়েছিলেন তিনি।
“তখন আসামি সজীব সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে এবং আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় তারা আমার আইনজীবীর সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে।”
ভুক্তভোগী এই নারী আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের তার বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশের অনুরোধ করে বলেন, “নিউজ হলে পুলিশ বাধ্য হয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করবে।”
মামলাটি তদন্তের পর খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক রুশদ হাসান গত ২৬ নভেম্বর আদালতে অভিযোগত্র দাখিল করেন। এই মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দিন রয়েছে।