উইন্ডমিল কাজ করে না, খরচ বেশি, পাখি মেরে ফেলে: ইউক্রেন প্রশ্নে ট্রাম্প
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইউক্রেন নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি ‘উইন্ডমিল বিরোধী’ বক্তব্য দিয়ে সবাইকে অবাক করে দেন।
তিনি বলেন ‘সবুজ জ্বালানী বা উইন্ডমিল। এগুলো কাজ করে না। এতে খরচ অনেক বেশি। এগুলো সব পাখি মেরে ফেলে। তারা আপনার ভূবৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে দেয়।’
গত বুধবার ‘ফুল সেন্ড’ পডকাস্টে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা আলোচনা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নেল্ক বয়েজ ইউটিউব চ্যানেলের এই পডকাস্টে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প এভাবে সবাইকে অবাক করে দেন।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কাইল ফোরগিয়ার্ড ৪৫তম ট্রাম্পের কাছে ইউক্রেন বিষয়ে জানতে চান, এরপর কী হতে পারে বলে ভাবছেন? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি বেশ গুরুতর। কীভাবে এর শেষ হবে? ঘটনাপ্রবাহ সামনে কোন দিকে যাবে বলে ভাবছেন?’
সঞ্চালককে অবাক করে দিয়ে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে সম্পূর্ণ অবান্তর এক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন ট্রাম্প। তিনি বায়ু উইন্ডমিল বিষয়ে বলতে থাকেন।
ট্রাম্প বলেন, আমি আগেই বলেছি। এ রকম যদি হয়, তাহলে আমরা তাদের ফাঁদে পা দিতে যাচ্ছি। সবুজ জ্বালানী বা উইন্ডমিল। এগুলো কাজ করে না। এতে খরচ অনেক বেশি। এগুলো সব পাখি মেরে ফেলে। তারা আপনার ভূবৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে দেয়।
পরিবেশবাদীরা উইন্ডমিলের প্রেমে মত্ত উল্লেখ করে ট্রাম্প বলতে থাকেন, ‘আমি এ বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বলে যাচ্ছি। আমি সব উইন্ডমিল অকার্যকর করে দিয়েছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এগুলো ১০ বছরের বেশি টেকে না, এর আগে থেকেই এতে জং ধরে এবং নষ্ট হয়ে চারপাশের পরিবেশ নষ্ট করতে থাকে। পুরোপুরি অকার্যকর না হওয়া পর্যন্ত কেউ এগুলোকে অকার্যকর করে না। এক জায়গা থেকে সরিয়ে বড় জোর অন্য কোনো জায়গায় নিয়ে যায়, যেন সে জায়গাটাও ধ্বংস হয়।’
ইউক্রেন প্রসঙ্গে ট্রাম্পের এ উত্তর অদ্ভুত শোনালেও, উইন্ডমিল নিয়ে ট্রাম্পের এ ধরনের বিষোদগার এটাই প্রথম নয়।
২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ট্রাম্প স্কটল্যান্ডে গলফ কোর্স বানানোর জন্য একটি জমি কিনেছিলেন। তখন তিনি জমির সীমানায় উইন্ডমিল বানানোর তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, ‘আমি সমুদ্র দেখতে চাই। উইন্ডমিল নয়।’
তবে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে তার পরাজয় হয় এবং ২০১৮ সালে তার সে জমির চারপাশে ১১টি উইন্ডমিল নির্মিত হয়।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্প পরিবেশবান্ধব জ্বালানী উৎপাদনের ক্ষেত্রে উইন্ডমিলের চরম বিরোধিতা করে গেছেন। ২০১৯ সালে মার্কিন হাউজ রিপাবলিকানদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনার বাড়ির আশেপাশে কোথাও যদি কোনো উইন্ডমিল থাকে, তবে আপনাকে অভিনন্দন। আপনার বাড়ির মূল্য ৭৫ শতাংশ কমে গেছে এবং অনেকেই বলেন, এই শব্দে (উইন্ডমিল টারবাইন ঘোরার) ক্যান্সার হয়।’
উল্লেখ্য, ক্যান্সারের সঙ্গে উইন্ডমিলের টারবাইন ঘোরার শব্দের কোনো যোগসূত্র বা কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পাওয়া যায়নি।
একই বছরের শেষের দিকে তিনি আবারও উইন্ডমিল বিরোধী এক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই বাতাসের মতিগতি বুঝি না। তবে আপনারা জানেন, আমি উইন্ডমিল বিষয়ে খুব ভালো করে জানি। এ যন্ত্রগুলোতে বিকট শব্দ হয়। এগুলো পাখিদের হত্যা করে। আপনার কি পাখিদের কবরস্থান দেখার ইচ্ছে আছে? তাহলে যে কোনো দিন, যে কোনো একটি উইন্ডমিলের নিচে চলে যান। আপনার সারা জীবনে যত পাখি দেখেছেন, তার চেয়ে বেশি পাখি সেখানে মরে পড়ে থাকতে দেখবেন।’
তবে বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বক্তব্যের মাঝে লুকিয়ে আছে ইউক্রেন প্রসঙ্গে তার প্রকৃত চিন্তাধারা। তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে জ্বালানীর দিক দিয়ে আরও স্বনির্ভর হতে হবে, বিশেষ করে রাশিয়া বা ইরানের মতো দেশ থেকে আমদানি করা তেল ও গ্যাসের ওপর দেশটির নির্ভরতা কমে আসে।
ট্রাম্পের মতে, এই স্বনির্ভরতা অর্জনের প্রক্রিয়াটি ‘সবুজ জ্বালানী’ সমর্থক মহলদের তৎপরতার কারণে ধীর হয়ে গেছে। ট্রাম্প চান জীবাশ্ম জ্বালানীর বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে।