এক বছরে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে ১২ গুণ
নানা প্রতিশ্রুতির পরও সীমান্ত হত্যা কমছে না। আর গত তিন বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি সীমান্ত হত্যা হয়েছে গত বছর৷ সর্বশেষ দিল্লীতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বৈঠকের পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই।
বৃহস্পতিবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওয়াহেদপুর সীমান্তে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বিএসএফ-এর গুলিতে। আহত হয়েছেন দুই জন। স্থানীয় সূত্র জানায় তারা গরু ব্যবসায়ী।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ওয়াহেদপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে গরু আনতে যায়। তখন ভারতীয় চাঁদনী চক ক্যাম্পের টিকলীরচর এলাকায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি করলে সেলিম ও সুমন নামে দুই বাংলাদেশি নিহত হন। সাকির ও লালবর আহত হন। সহযোগীরা নিহতদের লাশ ও আহতদের বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তারা ১১ জন ভারতে গরু আনতে গিয়েছিলেন। আহত দুইজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লীতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন হয়। সেখানে হত্যা কমিয়ে আনা নিয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশ থেকে বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং ভারতের বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী বিবেক জোহরীর নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল ওই সম্মেলনে অংশ নেয়।
ঢাকায় ফিরে ২ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম সীমান্ত হত্যা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেছি।আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। বিএসএফ মহাপরিচালককে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। ওনারা এ বিষয়ে আরও সতর্ক ও সজাগ থাকবেন। যেন সীমান্তের এই অনাকাঙ্খিত হত্যাকাণ্ড এভয়েড করা যায়।”
এদিকে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী- বিএসএফ’র হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৮ জন বাংলাদেশি। এরমধ্যে ৩৩ জন গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে এবং বাকি ৫ জনকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে।
কিন্তু বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরো বেশি। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) হিসেবে ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয় জন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন। ২০১৮ সালে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। আর ২০১৭ সালে ২৪ জন।
সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতি শুধু সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়েই রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকেও দেয়া হয়েছে। সীমান্তে প্রাণঘাতী বা ‘লিথাল উইপন’ ব্যাবহার না করার ব্যাপারেও দুই দেশ প্রতিশ্রুতবদ্ধ। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ঢাকায় দুই দেশের সীমান্ত সম্মেলনেও এই সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। কিন্তু তা বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না। সীমন্তে বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বাড়ছেই।
তিনি বলেন, ভারত তো একটা হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তারা তো সীমান্ত হত্যা বন্ধ করবেনা। সীমান্তে মুসলমানদের মারছে। আর ঠেলে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। আমরা প্রতিটি ঘটনার প্রতিবাদ করছি। কিন্তু ভারত হত্যা করবেই সে থামবে না। তারা মারছে তো মারছেই। কিন্তু বাংলাদেশের দিক দিয়ে শক্ত কোনো প্রতিবাদ দেখতে পাচ্ছিনা। মেরে দিচ্ছে কোনো বিচার নাই।
সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানি হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘‘সীমান্ত হত্যা আবার বেড়ে যাওয়ার পিছনে রাজনৈতিক এবং সামাজিক কারণ আছে। আর দুই দেশেই এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। সেটা গড়ে ওঠেনি। ভারত বলছে। আমরাও বলছি। তবে ফেলানি হত্যার পর সীমান্ত হত্যা কমেছে।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় সীমান্তে গরু ব্যবসীরা যে পরিমাণ হত্যার শিকার হন , মাদক ব্যবসায়ীরা কিন্তু তত নন। কিন্তু মাদক চোরাচালন বেশি হয়।”