শুধু আরব দুনিয়ার জ্বালানি তেলে বাঁচবে বিশ্ব!
ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমারা। কিন্তু রাশিয়ার তেল, গ্যাসের ওপর ইউরোপের অধিক নির্ভরতার কারণে এ খাতকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে’ রাখা হয়েছে বলে জানান জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস।
অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি স্টাডিজ গত সপ্তাহে জানিয়েছে, অশোধিত তেলের দ্বিতীয় বড় উৎপাদক রাশিয়া। ২০২১ সালে বিশ্বের মোট তেল উৎপাদনের ১৪ শতাংশ করেছে রাশিয়া৷ রাশিয়ার মোট তেল রফতানির ৬০ ভাগ যায় ইউরোপে। ৩৫ শতাংশ যায় এশিয়ায়।
তেল কিনতে ইউরোপ রাশিয়াকে প্রতিদিন তিন হাজার ২৭০ কোটি টাকা দিচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
জার্মানির প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ৩৮ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। তাই সোমবার এক বিবৃতিতে জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে বার্লিন। কিন্তু ইউরোপে প্রতিদিনের জীবনযাপনে এখনো রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ ‘প্রয়োজন’ বলে জানান তিনি। ‘(রাশিয়ার জ্বালানি ছাড়া) ইউরোপে ঘর গরম রাখতে, পরিবহণ ও শিল্প খাতে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি এ মুহূর্তে অন্য জায়গা থেকে পাওয়া সম্ভব নয়,’ বলে জানান ওলাফ শলৎস।
রাশিয়া থেকে রাতারাতি তেল ও গ্যাস আমদানি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও সোমবার মন্তব্য করেছেন। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেন, রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ইউরোপের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে ‘সময় লাগবে।’
বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়া থেকে ক্রমান্বয়ে তেল, গ্যাস আমদানি কমানোর ঘোষণা আসতে পারে।
শুধু আরব দুনিয়ার জ্বালানি তেলে বাঁচবে বিশ্ব!
করোনা মহামারির প্রভাব কমতে থাকায় তেলের চাহিদা বাড়ছে। ওই কারণে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই তেলের দাম বাড়ছে। রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র তেল আমদানি বন্ধ করার কথা ভাবছে – এ খবরে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৪০ ডলার ছুঁয়েছে। ২০০৮ সালে এ তেলের দাম রেকর্ড ১৪৭.৫ ডলার হয়েছিল।
রাশিয়ার তেল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর দাম মোটামুটি পর্যায়ে রাখতে চাইলে অন্যান্য দেশের তেল উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্বে অশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় উৎপাদক সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষে সহজে তেল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
কিন্তু তাদের পক্ষে দ্রুত রাশিয়ার তেলের স্থান নেয়া কঠিন বলে মনে করেন কারেন ইয়ং। তিনি ওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের প্রোগ্রাম অন ইকোনমিক্স অ্যাণ্ড এনার্জির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। তিনি বলেন, ‘উৎপাদন বাড়ানোর মানে এটা নয় যে, ইউরোপে সরাসরি রফতানি বাড়া।’ তেলের বাজার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া এত সহজ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বুধবার তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংস্থা ওপেক ও তার সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে একটি বৈঠক হয়। সেখানে এপ্রিল মাসে প্রতিদিন চার লাখ ব্যারেল তেল বেশি উৎপাদন করতে একমত হয় তারা। অর্থাৎ মার্চ মাসের বাকি সময়টা তেল উৎপাদন বাড়ানোর কোনো ঘোষণা এ মুহূর্তে নেই।
লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মিডল ইস্ট পলিসির রিসার্ট ফেলো হাসান আলহাসান বলেন, ভূ-রাজনৈতিক ঘটনার ভিত্তিতে ওপেক উৎপাদনে পরিবর্তন আনে না। তারা শুধুমাত্রা মার্কেট ফান্ডামেন্টাল বিবেচনা করে পরিবর্তন আনে।
তবে কারেন ইয়ং মনে করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমানকে সরাসরি ফোন করেন তাহলে হয়ত সৌদি আরব উৎপাদন বাড়াতে সম্মত হতে পারে।
এছাড়া ন্যাটো ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে কিংবা রাশিয়ার তেল রফতানির ওপর সবাই নিষেধাজ্ঞা দিলে সৌদি আরব তার মত পরিবর্তন করতে পারে বলে মনে করেন হাসান আলহাসান।
সূত্র : ডয়চে ভেলে