গত ৫ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ৩ জন সাংবাদিক ও দুজন ফটো সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় নির্যাতকের ভূমিকা পালন করেছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
স্টুডেন্ট এগেইনেস্ট টর্চার (স্যাট) নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন এ তথ্য জানায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, নির্যাতনের মতো অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ষান্মাসিক ও বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই প্রতিবেদন তুলে ধরছি যাতে প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করে নির্যাতকদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রাশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি প্রাশাসনিক বিধি এবং আইন তৈরি করারও প্রস্তাব রাখছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান নির্যাতন, নিপীড়ন ও সহিংসতাকে আমরা মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে দেখি। নাগরিকরা কোনো নির্যাতন, নিষ্ঠুর ও অমানবিক দণ্ডের শিকার হবে না- এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তেমনি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা যে কোনো নির্যাতন, নিপীড়ন বা সহিংসতার শিকার হবে না, তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা।
সিফাত জানান, স্যাট প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংগঠিত নির্যাতনগুলোর পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনা তথ্যবহুল আকারে কখনো প্রকাশিত হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের জানা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, আমরা এবারের প্রতিবেদনে নির্যাতনকারীর নাম প্রকাশ করছি না। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে আমরা নির্যাতনকারীর নাম, বিভাগ, হল এসব প্রকাশ করবো। প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা দেবো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে আচার্য ও আদালতের দ্বারস্থ হবো, রিট করা হবে।
গত কয়েক মাসের ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর আশ্বাস দিয়েছিলেন, যেকোনো ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলার পর নির্যাতন শুরু হয়। এসব নির্যাতনের মধ্যে মাত্র তিনটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু সেগুলো নামমাত্র ব্যবস্থা। সত্তর শতাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসন নির্বিকার থাকে, ত্রিশ শতাংশ নির্যাতনের ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।