জালভোটের মহাউৎসব: ঢাকা বার নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান নীল প্যানেলের
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বচন কমিশনার আবদুল্লাহ আবু সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন অভিযোগ করে এই নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা।
একইসাথে একজন নিরপেক্ষ প্রধান ও নির্বাচন কশিনারের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিট এবং নীল প্যানেলের পক্ষে ভোটে অংশ গ্রহণকারী সকল প্রার্থীরা।
রোববার ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ নির্বাচনে নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী খোরশেদ মিয়া আলম ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদ ওমর ফারুক ফারুকী, আইনজীবী ইকবাল হোসেন, খোরশেদ আলম, মহসিন মিয়া, গোলাম মোস্তফা খান, জয়নুল আবেদীন মেজবাহ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা বার নির্বাচনে বলপূর্বক ব্যালট সংগ্রহ করে এবং ব্যালট বই ছিনতাই করে তাতে সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেয়া হয়। এতে জালভোটের এক মহাউৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের দুইদিন নির্বাচন কমিশনের ব্যাচ পরে নির্বাচনী বুথের ভেতর প্রবেশ করে সাদা প্যানেলের প্রার্থীর পক্ষে বলপূর্বক প্রায় সকল ভোটোরের ভোট কেটে দেয়া হেয়েছে। ভোটাররা প্রতিবাদ করলে তাদেরকে নানাভাবে অপমান-অপদস্থ করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করেন।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বহিরাগতরা ভোটার স্লিপ বলপূর্বক সংগ্রহ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাদা দলের পক্ষে পক্ষপাতমূলক আচারণ করে ঢাকা বারের ২০২২-২০২৩ সেশনের নির্বাচনকে ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ন্যায় একটি প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করেছেন। নীল প্যানেল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা প্রদর্শন করছে এবং ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিট ও সাধারণ আইনজীবীদের পক্ষে এ প্রহসনের নির্বাচন ও ঘোষিত ফলাফল সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করা হলো।
সভাপতি প্রার্থী খোরশেদ মিয়া আলম বলেন, আমরা বার বার লিখিত আপত্তি দেয়ার পর মৌখিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের বিশ্বাস করেন, এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন করব। আমরা তার কথায় আস্থা এনেছিলাম।
নীল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ব্যক্তিগতভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বার বার বলেছি, ভোটারা বুথের মধ্যে অভিযোগ করছে যে, তাদের ভোট কেটে দেয়া হচ্ছে। ব্যবস্থা নেন, ব্যবস্থা নেন। নিচ্ছি নিচ্ছি বলে আমাকে আমার জায়গায় লাইনে যেতে বলেন। এমনকি কালো কোট পরে বাহির থেকে অচেনা লোক এসেছে যারা আইনজীবী না, আইনজীবীর ছাত্রও না। ওরা এসে ভোট দিয়েছে। তারা আমার চেম্বারে গিয়ে ভাংচুর করেছে। চেম্বার তছনছ করা হয়েছে। কোনোকিছু না পেয়ে শেষে বলছে ভোটার লিস্ট পেয়েছে। একজন প্রার্থীর চেম্বারে ভোটার লিস্ট থাকতে পারে এটাই স্বাভাবিক। তিন তরফা আমরা চেম্বার তল্লাসি করেছি। মানুষকে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য ভোটের দিন তিনবার আমার চেম্বার তল্লাশি করেছে। শেষে ভাংচুর করেছে। বলার কোনো ভাষা নেই। নির্বাচন কমিশনারের কাছে বার বার গিয়েছি, কিন্তু প্রতিকার পাইনি।
অভিযোগে আরো বলা হয়, ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনার জন্য ঢাকার মেট্রো পি পি এবং আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আবুকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়। আবদুল্লাহ আবুর নিয়োগে সকল সাধারণ আইনজীবীর আপত্তি ছিলো। আবদুল্লাহ আবুর নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন ঢাকা বারের ২০২১-২০২২ এ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচনের ফল পরিবর্তন করার অভিযোগ ছিল। নানা রকম বিতর্কিত ভূমিকা প্রমাণিত হওয়ার পরও তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়। ২০২১-২০২২ সালের নির্বাচনে অনিয়ম করার কারণে তার নিয়োগের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ও সাধারণ আইনজীবীরা প্রতিবাদ করেছেন। সভা সমাবেশ করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম লিখিতভাবে আবুর নিয়োগের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রদান করেছে। এছাড়াও নীল প্যানেলের সকল প্রার্থীরাও আবুর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিট ও সাধারণ আইনজীবীদের মনে শংকার জন্ম হয় যে, আবুর পক্ষে দলীয় প্রভাবের বাইরে গিয়ে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সক্ষম হবেন না। বাস্তবে এসব আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল ধারাণাকে সত্য প্রমাণ করে আবু ২০২২-২০২৩-এর নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৭টি পদে জয় পেয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা। অপরদিকে, দুটি সম্পাদকীয় পদসহ ছয়টি পদে জয় পায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য সমর্থিত নীল প্যানেল।
গত ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১১ হাজার ৪৬২ জন আইনজীবী ভোট দেন।