নগরীর রাস্তা ড্রেন সংস্কার: উপদেশ নিতেই মাসে ২২ লাখ টাকা খরচ
যেখানে স্থানীয় বিভাগের এবং সিটি করপোরেশনের পর্যাপ্ত প্রকৌশলী রয়েছে সেখানে অর্থ খরচ করার জন্য নিয়মিত রুটিন কাজের জন্যও পরামর্শক নিতে হচ্ছে। আর এই উপদেষ্টার উপদেশ নিতে মাসে ২২ লাখ টাকা খরচ হবে। এতে তিন বছরে ব্যয় হবে পৌনে আট কোটি টাকা। অথচ প্রতিটি অঞ্চলেই প্রকৌশলী রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা ও ফুটপাথ সংস্কারের মাধ্যমে উন্নয়ন নিয়মিত রুটিন কাজ। এই খরচের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে খোদ পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাথ নির্মাণ এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত রুটিনমাফিক কাজের জন্য উপদেষ্টা বা পরামর্শক সেবার প্রয়োজনীতা আছে বলে মনে হয় না। যে সংস্থার রেট শিডিউল তৈরির সক্ষমতা রাখে সে সংস্থা রাস্তার ড্রয়িং ডিজাইন এস্টিমেট তৈরির সক্ষমতা থাকার কথা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের দেয়া প্রকল্প প্রস্তাবনার তথ্য থেকে জানা গেছে, চার শ’ বছরের ঢাকা শহরকে মেগাসিটি বলা হলেও পরিকল্পিত শহরের কোনো বৈশিষ্ট্য এখানে বিদ্যমান নেই। যেমন পর্যাপ্ত সড়ক, পরিবহন অবকাঠামো, গণপরিবহন সুবিধা, সামাজিক পরিবেশ সেবা প্রভৃতি। ১৯৭৪ সালে যেখানে এই শহরের জনসংখ্যা ছিল ১৬ লাখ। এখন সেই জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে দেড় কোটি। বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার শতকরা প্রায় ৪ ভাগ, যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ঢাকা শহরে সড়কের পরিমাণ মোট আয়তনের ৭ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ২৫ শতাংশের তুলনায় অনেক নি¤েœ। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের সামঞ্জস্য নেই। অপর্যাপ্ত রাস্তা কাভারেজ ছাড়াও বিদ্যমান রাস্তাগুলোর অবস্থা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শোচনীয়।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার সড়ক, নর্দমা ও ফুটপাথ উন্নয়ন করা। আর সড়কের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ড্রেনেজ লাইন নির্মাণ করা। প্রকল্প এলাকার ফুটপাথ উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে থচারীদের চলাচল সুগম করা। বলা হচ্ছে প্রকল্পটি সমাপ্ত হলে ৩০ শতাংশ সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন, ৪০ শতাংশ জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। পাশাপাশি ১৫ শতাংশ পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।
প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো, উত্তর সিটির নির্ধারিত এলাকার ১২১.৮৭ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন, ২১৯.১০ কিলোমিটার নর্দমা উন্নয়ন ও সার্ভিস প্যাসেজ এবং ৮০.২৬ কিলোমিটার ফুটপাথ উন্নয়ন। পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন ছয়টি আর্চ ব্রিজ এবং একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটির ২০১৯ সালের রেট শিডিউল ধরে প্রকল্পের প্রতিটি খাতের খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৯৬৬ কোটি টাকা। তিন বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই ধরনের প্রকল্প একই সিটিতে চলমান থাকায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি দ্বৈত বলে কমিশন গত এক বছরে অনুমোদন দেয়নি। আবারো প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। চলতি ২০২২ সালে অনুমোদন পেলে আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর সমাপ্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয়ের বিভাজন থেকে দেখা যায়, সড়ক উন্নয়নে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ধরা হয়েছে তিন কোটি ২৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা। নর্দমা উন্নয়নে কিলোমিটারে দুই কোটি ৫৩ হাজার টাকা। ফুটপাথ উন্নয়নে ব্যয় কিলোমিটারে ৬০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। প্রতিটি আর্চ ব্রিজে ধরা হয়েছে আট কোটি সাড়ে ছয় লাখ টাকা। সমজাতীয় প্রকল্প থেকে এই ব্যয় বেশি বলে প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে। এমনকি ভৌত অবকাঠামো বিভাগও ব্যয়কে বেশি বলে আপত্তি জানিয়েছে। আর প্রকল্পের এসব কাজের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে উপদেষ্টা। সেখানে বলা হয়েছে উপদেষ্টা সেবা গ্রহণে খরচ সাত কোটি ৭৪ লাখ তিন হাজার টাকা। তিন বছরের এই খরচ মাসে সাড়ে ২১ লাখ টাকা।
সিটি করপোরেশন বলছে, চার বা পাঁচ বছর পর পর এসব রাস্তা, নর্দমা রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এই করপোরেশনের আওতায় এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সড়ক ও ১২ শ’ কিলোমিটার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক বিদ্যমান। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা সড়কের অবস্থা দ্রুত খারাপ করে ফেলে। বছরে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার রাস্তা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে উন্নয়ন করা সম্ভব হয়, যার কারণে বেশির ভাগ রাস্তা ও নর্দমা মেরামতের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত থেকে যায়। ভোগান্তির শিকার হন নগরবাসী।