পুতিনের ওপর ইইউ-যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র।
ইইউ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুক্রবার জারি করা নিষেধাজ্ঞার আওতায় ইউরোপে থাকা দুই রুশ নেতার সম্পত্তি জব্দ করা হবে।
তবে ইউরোপে রুশ নেতাদের খুব বেশি সম্পদ নেই। তবুও ব্যক্তিগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ সংকেত।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে পুতিন ও তার শীর্ষ কূটনীতিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সপ্তাহে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ইইউ দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলো। এসব নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অভিজাতদের আঘাত ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার ৭০ শতাংশ কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইইউর বৈঠক শেষে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবক জানান, আমরা এখন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় প্রেসিডেন্ট পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। ইউক্রেনে নিষ্পাপ মানুষের মৃত্যুর জন্য তারা দায়ী। ইউরোপীয় হিসেবে আমরা এটি মেনে নিতে পারি না।
অপরদিকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইনের সঙ্গে ফোনালাপের পর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব বলে আশা করছি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন বাইডেন। সে সময় পুতিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। একদিনে কী এমন পরিবর্তন হলো যে পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, এই সংঘাতের শুরু থেকেই প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গি এবং নীতি কঠোর। আমার বলা উচিত আগে থেকেই তিনি এমন। আমাদের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হলো।
এদিকে হামলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে পৌঁছে গেছে রাশিয়ার সেনারা। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে তারা। রাজধানী রক্ষায় ইউক্রেনের সেনাদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকেরাও অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। অবিলম্বে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব উঠছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। নিউইয়র্ক, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন, মস্কোসহ বিভিন্ন দেশের প্রধান শহরগুলোতে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে এক হাজারের বেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাধীন পর্যবেক্ষক গ্রুপ ওভিডি-ইনফো।
অন্যদিকে, ইইউ পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেল জানিয়েছেন, ইউইর নিষেধাজ্ঞায় থাকা তৃতীয় বিশ্বনেতা হলেন ভ্লাদিমির পুতিন। এর আগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। বোরেল জানান, প্রয়োজন হলে আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।
শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপকে দ্রুত পদক্ষেপ এবং মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে কিয়েভে রুশ হামলা নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তোলেন।