এক বছরেই শেয়ারবাজার থেকে উধাও ৭১ হাজার কোটি টাকা
বছর জুড়েই ছিল শেয়ারবাজারে টালমাটাল অবস্থা। পতনের সাগরে হাবুডুবু খেয়েছে শেয়ারবাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে হারিয়েছে শত শত কোটি টাকা। শুধু গত এক বছরেই ঢাকা স্টক একএসচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে।
মঙ্গলবারও (৭ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ২৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ফলে এদিন দেশের শীর্ষ এই শেয়ারবাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৬২ কোটি টাকায়।
যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা কম। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৬৫৫ পয়েন্টে। সেদিন বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ১ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা।
মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এতোটা মূলধন কম হওয়া একটি উদ্বেগজনক ঘটনা বলে মন্তব্য করেন এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সায়ীদ। গত এক বছরে বাজার যে জায়গায় নেমেছে, তাকে ২০১০ সালের পতনের চেয়েও বড় হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।
প্রতিনিয়ত পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। তারা তাদের বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষার কোনো উপায় পাচ্ছেন না। এতে নীরবে তাদের রক্তক্ষরণ বেড়েই চলছে। মানসিকভাবে ভেঙেও পড়েন অনেক বিনিয়োগকারীরা। অনেকে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। সংসার জীবনেও অশান্তি দেখা দিয়েছে কারও কারও।
মিলন নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘অব্যাহত পতনের কবলে পড়ে প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছি। শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে বের হয়ে যাব, তাও পারছি না। বিনিয়োগ করা অর্থ হারিয়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না। ছেলের স্কুলে ভর্তি করার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছি। সংসারে খালি নেই নেই অবস্থা। এতে এক ধরনের মানসিক অশান্তির মধ্যেও আছি। কবে এ অশান্তি থেকে মুক্তি পাব, কিছুই জানি না।’
ইয়াওয়ার সায়ীদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে আর্থিক ব্যবস্থাপনা কাঠামোর বাইরের কিছু ভাবলে হবে না। সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা ভালো না। এখানে বাজারকে আলাদাভাবে দেখার কিছু নেই।’
ব্যাপক এই মূলধন উধাও হওয়ায় প্রভাব পড়বে জিডিপিতেও। বাংলাদেশের জিডিপির আকার ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। সে হিসেবে ডিএসইর বাজার মূলধন জিডিপির মাত্র ১৩ শতাংশ।
রাজধানীর ঢাকার এই পুঁজিবাজার পিছিয়ে আছে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকেও। দ্য গ্লোবাল ইকোনমি ডটকমের সর্বশেষ হিসাবে, ২০১৮ সালে বিশ্বের জিডিপির তুলনায় পুঁজিবাজারের গড় বাজার মূলধন ছিল ৭০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। পাশের দেশ ভারতে তা ৭৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সে হিসেবে ঢাকার পুঁজিবাজার অনেকটাই পিছিয়ে আছে।