রাশিয়ার ওপর ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞা, নর্ড স্ট্রিম ২ বন্ধের ঘোষণা জার্মানির

0

পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাকামী বিদ্রোহীদের স্বীকৃতি দিয়ে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েনের জেরে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্রিটেন। অপরদিকে রাশিয়া থেকে জার্মানিগামী গ্যাস পাইপলাইন ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি।

মঙ্গলবার লন্ডনে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার এই ঘোষণা দেন।

ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার মোট পাঁচটি ব্যাংক রয়েছে।

এগুলো হলো রোসিয়া, আইএস ব্যাংক, জেনারেল ব্যাংক, প্রোমসভায়াজ ব্যাংক এবং ব্ল্যাক সি ব্যাংক।

রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাংকগুলোর সাথে সকল প্রকার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

একইসাথে তিন রুশ নাগরিককেও এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন গেনেডি তিমচেনঙ্কো, বরিস রোটেনবার্গ এবং ইগোর রোটেনবার্গ।

ব্রিটেনে থাকা তাদের সকল সম্পদ জব্দ অবস্থায় থাকবে। তারা ব্রিটেনে যাতায়াত করতে পারবেন না। ব্রিটেনের কোনো নাগরিক তাদের সাথেব্যবসাবাণিজ্য করতে বা সম্পর্ক রাখতে পারবেন না।

বরিস জনসন জানিয়েছেন, ব্রিটেন এবং তার সহযোগী মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করবে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে তার বক্তব্যে বলেন, ‘পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুইটি অঞ্চলের স্বাধীনতায় স্বীকৃতি দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টভাবে মিনস্ক চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।’

বিচ্ছিনতাবাদী অঞ্চলের স্বীকৃতি দিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন সম্পূর্ণ ইউক্রেনে হামলা করার প্রেক্ষাপট তৈরি করছেন বলে অভিযোগ করেন বরিস জনসন।

তিনি বলেন, ‘পুতিনের পরিকল্পনার পরবর্তী অংশের বাস্তবায়ন ঠেকাতে আমাদের এখনি প্রস্তুতি নেয়া উচিত।’

অপরদিকে বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলৎজ রাশিয়া থেকে জার্মানিগামী গ্যাস পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম ২ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘পরিস্থিতি বর্তমানে মৌলিকভাবে বদলে গেছে। আমাদের নর্ড স্ট্রিম-২ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ’পাইপলাইনে অনুমোদন এখনোই হচ্ছে না এবং অনুমোদন ছাড়া নর্ড স্ট্রিম ২ চালু হতে পারবে না। আমাদের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সাম্প্রতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে আমাদের গ্যাস সরবরাহের নিরাপত্তার বিষয়ে আবার বিবেচনা করবেন।’

পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহীদের স্বীকৃতিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার ইউক্রেন ঘিরে চলমান সংকটের মধ্যে দেশটির পূর্বে বিদ্রোহীদের প্রতিষ্ঠিত দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় রুশ সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন।

২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকারের পতনের পর রাশিয়া দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়ে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি দখল করে নেয়। পাশাপাশি মস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব ইউক্রেনে বিপুল অঞ্চল দখল করে নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা দুই রাষ্ট্র ‘দনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই সংঘর্ষ বন্ধে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় ২০১৫ সালে বেলারুশের মিনস্কে ইউক্রেন ও রাশিয়া এক চুক্তি করে।

মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী এই অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় ও দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সরে যাওয়ার বিষয় যুক্ত ছিলো। দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা সরে গেলে ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গণভোটের ব্যবস্থা করবে।

কিন্তু পরস্পরের প্রতি সহিংসতার অভিযোগের জেরে এই চুক্তি আর বাস্তবায়িত হয়নি।

এরই মধ্যে ২০২০ সালে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের ন্যাটো সামরিক জোটের ‘ইনহ্যান্সড অপারচুনিটি পার্টনার’ পদ পেলে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়। নিজ দেশের সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণের শঙ্কায় রাশিয়া ইউক্রেনের যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক জোটে যোগ দেয়ার বিরোধিতা করছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের পর উত্তেজনা নতুন করে বাড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক লাখ সৈন্য ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করেছে মস্কো।

যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, ইউক্রেনে হামলার জন্যই রাশিয়া ওই সৈন্য সমাবেশ করেছে। কিন্তু রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, সামরিক বাহিনীর মহড়ার অংশ হিসেবে ওই সৈন্য সমাবেশ করা হয়েছে।

পরে কিছু সৈন্য সরিয়ে নেয়ারও ঘোষণা দেয় রাশিয়া।

কিন্তু তাতেও ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো আশ্বস্ত না হয়ে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সব সৈন্য সরিয়ে নেয়ার আহ্বান অব্যাহত রাখে।

সৈন্য সমাবেশের জেরে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা প্রশমনে বিভিন্ন পন্থায় কূটনেতিক সমাধানের চেষ্টা চলছিলো।

কিন্তু নতুন করে বিদ্রোহীদের বিষয়ে রাশিয়ার পদক্ষেপ দুইপক্ষের মধ্যে যুদ্ধকে প্রায় অনিবার্য করে তুলেছে।

সূত্র : বিবিসি ও আনাদোলু এজেন্সি

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com