প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে নতুন সংস্থা গড়ছেন
তিউনিসিয়ায় বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধান ও স্বাধীনতার সংরক্ষণের বিষয়ে শর্তাধীন নতুন এক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার আদেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ।
রোববার প্রকাশিত এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে এই আদেশ জারি হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, প্রেসিডেন্টকে সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই ক্ষমতাবলে তিনি আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনে অস্বীকার করা বিচারকদের তিনি অব্যাহতি দিতে পারবেন এবং পছন্দমতো বিচারকদের মনোনয়ন বা পদোন্নতি দিতে পারবেন।
একইসাথে আদেশে বিচারকদের জন্য কর্মবিরতিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
নতুন এই আদেশ বাস্তবায়িত হলে কায়েস সাইদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বিচার বিভাগও তার নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ভেঙে দেয়ার ঘোষণা করেন।
প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সদস্যদের পক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেন।
কায়েস সাইদ অভিযোগ করেন, কাউন্সিলের সদস্যরা ‘কোটি কোটি’ টাকা ঘুষ নিচ্ছেন এবং রাজনৈতিক স্পর্শকাতর মামলার তদন্তগুলোতে দেরি করছেন।
পরে ৭ ফেব্রুয়ারি তিউনিসীয় পুলিশ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ভবন বন্ধ করে দেয়।
২০১৬ সালে তিউনিসিয়ায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং তাদের পেশাগত প্রসার নিশ্চিত করার জন্য এই সংস্থাটি গঠন করা হয়েছিলো।
সংস্থাটি ভেঙে দেয়ার জেরে তিউনিসিয়ায় বিচারকরা ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দেন।
বিচারকদের কর্মবিরতির জেরে ৯ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন সাইদ।
গত বছর ২৫ জুলাই করোনা পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ায় সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জেরে আকস্মিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর রাতে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ দুই বছর আগে নির্বাচিত পার্লামেন্ট ৩০ দিনের জন্য স্থগিত, প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশিকে বরখাস্ত ও দেশের নির্বাহী ক্ষমতা নিজের হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আদেশ জারি করেন।
পরে ২৩ আগস্ট ‘রাষ্ট্রের জন্য হুমকি’ বিবেচনায় পরবর্তী আদেশ দেয়া না পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার আদেশ দেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ।
অপরদিকে ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের কিছু অংশ স্থগিত করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা জোরদার করেন সাইদ।
তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো এই আদেশকে ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’ বলে অভিযোগ করে আসছে।
২০১১ সালে আরব বসন্তের সূচনাকারী দেশ তিউনিসিয়ায় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে ২৪ বছর দেশটি শাসন করা একনায়ক জাইন আল আবেদীন বিন আলী ক্ষমতাচ্যুৎ হন। এর পর থেকেই গত দশ বছর ভঙ্গুর অবস্থা সত্ত্বেও আরব বিশ্বের একমাত্র গণতান্ত্রিক শাসন উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে চালু ছিলো।
সূত্র : আলজাজিরা