ভারতে কংগ্রেস কি এখনো শাসক বিজেপির প্রবল প্রতিপক্ষ?
ভারতে কংগ্রেস কি এখনো শাসক বিজেপির প্রবল প্রতিপক্ষ? প্রশ্নটা তুলে দিয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আচরণ। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবে জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে পরপর দুই দিন তিনি শুধু কংগ্রেসকেই আক্রমণ করে গেলেন। গতকাল সোমবার লোকসভায় কংগ্রেসের পাশাপাশি আম আদমি পার্টি ও শিবসেনাকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার বন্দোবস্ত করে দিয়ে এই দলগুলোই দেশে কোভিড সংক্রমণ ছড়িয়েছে। মঙ্গলবারও তাঁর নিশানায় শুধুই কংগ্রেস। রাজ্যসভায় তিনি বলেন, কংগ্রেস এ দেশের যত অনাসৃষ্টির কারণ। কংগ্রেস না থাকলে দেশ অন্যভাবে বিকশিত হতো। তিনি বলেন, কংগ্রেস এখন আটকে পড়েছে শহুরে নকশালদের দর্শনে।
কংগ্রেস না থাকলে দেশের কী কী লাভ হতো, তার একটা লম্বা ফিরিস্তিও দিয়েছেন মোদি। তিনি বলেন, কংগ্রেস না থাকলে দেশের গণতন্ত্র স্বজন-পোষণমুক্ত হতো। দেশে স্বদেশিয়ানার বিকাশ ঘটত। জরুরি অবস্থার কলঙ্ক লাগত না। দশকের পর দশক ধরে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেত না। জাতপাতের বিরোধ থাকত না। আঞ্চলিকতা মাথা চাড়া দিত না। পাঞ্জাব জ্বলত না, শিখ নিধন হতো না। কাশ্মীর থেকে হিন্দুরা বিতাড়িত হতো না। রুটি তৈরির উনুন বা ‘তন্দুর’-এ নারীদের ঝলসাতে হতো না। সাধারণ মানুষজনকে সাধারণ পরিষেবা পেতে এত দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকতে হতো না।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময় কংগ্রেস সদস্যরা লোকসভা ত্যাগ করে চলে যাননি। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিবাদ জানিয়ে মাঝপথেই তাঁরা রাজ্যসভা ত্যাগ করেন। তবে মোদির সমালোচনায় এটা স্পষ্ট, যথেষ্ট হীনবল হওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেসকেই তিনি এখনো প্রধান প্রতিপক্ষ বলেই মনে করেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে যে যে বিষয় অনুল্লিখিত থাকার কারণে বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে তার উল্লেখ বলতে গেলে ছিলই না। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিম্নগামিতা, পররাষ্ট্রনীতির অসাড়ত্ব, চীনা আগ্রাসন, সার্বিক অসহিষ্ণুতা ও সামাজিক অসহায়তা নিয়ে সমালোচনার জবাবে তেমন কিছুই বলেননি। বদলে আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে মোদি বেছে নিয়েছিলেন কংগ্রেস ও তার ‘পরিবারবাদ’। তিনি বলেন, কংগ্রেসের পরিবারবাদের প্রথম বলি এ দেশের প্রতিভা ও মেধা। কারণ, পরিবারের বাইরে তারা কখনো তাকায়নি। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বিপদ এই পরিবারবাদ। পরিবার যখন সব থেকে বড় হয়ে ওঠে, তখন তার বলি হয় পরিবারের বাইরের মেধা ও প্রতিভা। কংগ্রেসের দরুন এ দেশে সেটাই ঘটেছে। তিনি বলেন, কংগ্রেসের ভারত ইন্দিরার মধ্যেই আবদ্ধ থেকে গেছে।
কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে মোদি টেনে আনেন মহাত্মা গান্ধীকেও। বলেন, গান্ধীজি চেয়েছিলেন কংগ্রেসকে গুটিয়ে ফেলতে। কেননা, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তা না হলে দেশের হাল কী দাঁড়াবে। সে জন্যই দলটাকে তিনি তুলে দিতে চেয়েছিলেন। মোদি বলেন, গান্ধীজির সেই সাধ পূর্ণ হলে ভারত আজ স্বজন-পোষণ থেকে মুক্ত হতে পারত।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী লোকসভায় তাঁর ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করার অভিযোগ এনেছিলেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। রাজ্যসভায় সেই প্রসঙ্গ তুলে মোদি বলেন, বিচ্ছিন্নতাকামীদের মদদ ও রাজ্যগুলোকে উসকানি দিয়ে এই বিরোধীরাই এখন দেশের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অভিযোগ, আমরা নাকি দেশের ইতিহাস বদলে দিচ্ছি। অথচ ঘটনা হলো, কংগ্রেস নিজেরাই এখন শহুরে নকশালদের কবজায় আবদ্ধ হয়ে গেছে।
জওহরলাল নেহরুকে মোদি এর আগেও বহুবার সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন। গতকালও তা থেকে বিরত হননি।’ তিনি বলেন, বিশ্বে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য গোয়ার প্রতিরোধ নেহরু ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। আজ বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তিতে কালি লেপতে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা ব্যস্ত। কোভিডের টিকাকরণের অসাধারণ নজিরেও তাঁরা গর্ববোধ করেন না।