মেশিনারিজ কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতি
চট্টগ্রামে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান গাজী ওয়্যারস লিমিটেডে আধুনিকীকরণের প্রকল্পের আওতায় ৪৫ কোটি টাকার মেশিনারিজ কেনার ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের টাকা লুটপাটের অভিযোগে উঠেছে। চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কোম্পানিটির ‘শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণ শীর্ষক প্রকল্পের’ ২০১৯-২০২০ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে এসব টাকা লোপাট করা হয়। প্রকল্পের আওতায় জাপান থেকে ইকুইপমেন্ট ও মেশিনারিজ আনার কথা থাকলেও অর্থ লুটপাট করতে তাইওয়ান থেকে নিম্নমানের মেশিনারিজ ও ইকুইপমেন্ট আনা হয়েছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অডিট অধিদপ্তরের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার লোকমান আকতার চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) ছিলেন গাজী ওয়্যারসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (বর্তমানে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক) প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন এবং উপপরিচালক ছিলেন তাজুল ইসলাম।
এদিকে ৪৫ কোটি টাকার মেশিনারিজ ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা তদন্তে শিল্প মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে। সদস্যসচিব করা হয়েছে একজন যুগ্মসচিবকে। কমিটির অপর সদস্য হচ্ছেন-বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের পরিচালক (পরিকল্পনা) মনিরুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার ২০১৭ সালে গাজী ওয়্যারস লিমিটেডকে আধুনিকীকরণ ও শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ৬৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক সভায় (একনেক) অনুমোদন পায়। প্রকল্পের আওতায় একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ, অন্যান্য নির্মাণকাজ ও ৯টি ভারী মেশিনারিজ ক্রয় করার কথা। ভারী মেশিনারিজ কেনার ক্ষেত্রেই বড় ধরনের এই দুর্নীতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
সূত্র জানায়, মেশিনাজির কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়টি জানতে পেরে একটি পক্ষ শিল্প মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও অডিট অধিপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অডিট অধিদপ্তরের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার লোকমান আকতার চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি টিম প্রকল্পটি অডিট করে। এতে তারা দুর্নীতি খোঁজ পান। তাই দেওয়া হয় অডিট আপত্তি।
অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে-গাজী ওয়্যারস লিমিটেড শক্তিশালী আধুনিকীকরণ শীর্ষক প্রকল্পের মেশিনারি অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট কেনার জন্য ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে দরপত্র পাওয়া যায়। কারিগরি সাব-মূল্যায়ন কমিটির ২য় সভায় ইতালির মেসার্স সিকমে ইটালিয়া ইমপিয়ান্টি ভায়া টরিনো ও জাপানের মেসার্স ডায়মন্ড প্রজেক্ট কো. লিমিটেডের দরপত্র কারিগরি বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির ৩য় সভায় কারিগরি মূল্যায়নে গ্রহণযোগ্য ও সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মেসার্স ডায়মন্ড প্রজেক্ট কোম্পানি লিমিটেড ও জাপানের হোকোয়েটসু ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডকে ক্রয়াদেশ প্রদানের সুপারিশ করা হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদের ১৯৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেশিনারি অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট কিনতে জাপানের ডায়মন্ড প্রজেক্ট কোম্পানি লিমিটেডকে ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়। কারিগরি সাব-মূল্যায়ন কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ ও কোম্পানির বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, এসব মেশিনারিজের কান্ট্রি অব অরিজিন জাপানের হওয়ার কথা থাকলেও দেখা গেছে, ৯টি মেশিনারিজের মধ্যে ৬টিই আনা হয়েছে তাইওয়ান থেকে। বাকি তিনটি কোথা থেকে আনা হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে কেবল তৈরির ভারী এসব মেশিনারিজ জাপানের পরিবর্তে তাইওয়ান থেকে এনে বিপুল অঙ্কের টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে অডিট কমিটি মনে করে। তবে এই ৯টি মেশিন কেনার ক্ষেত্রে কত টাকার দুর্নীতি হয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট করে এখনই বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
অডিট কমিটি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, ‘জাপানের পরিবর্তে তাইওয়ানে প্রস্তুতকৃত মেশিনারি অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ক্রয় করায় অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৯ টাকা।’