স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজোট হতে পারে পশ্চিমা দেশগুলো
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে সতর্ক করে ব্রিটেন বলেছে, গণতন্ত্রের জন্য স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পশ্চিমা দেশগুলো একজোট হয়ে দাঁড়াতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধের পরবর্তী যেকোনো সময়ের মধ্যে এখন এ দেশ দু’টি ‘বেশি সাহসী হয়ে উঠেছে’ বলে মন্তব্য করেছে ব্রিটেন।
পশ্চিমা নেতারা বলছেন, একবিংশ শতাব্দী গণতন্ত্র এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াইয়ের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত হবে। গণতন্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীন ও রাশিয়াকে শনাক্ত করেছে তারা। এ দেশ দু’টি স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী ঐকমত্যকে সামরিকভাবে, প্রযুক্তিগতভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। গতকাল শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার লোয়ি ইনস্টিটিউটে দেয়া এক বক্তৃতায় ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেন, বৈশ্বিক হুমকি মোকাবেলায় পশ্চিমকে অবশ্যই একসাথে সাড়া দিতে হবে, ভারত মহাসাগরীয় ও সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গভীর করতে হবে এবং ‘বিশ্বব্যাপী হানাদারদের মুখোমুখি হতে হবে’।
ট্রাস বলেন, ‘বৈশ্বিক হানাদাররা এমন সাহসী হয়ে উঠেছে যা স্নায়ুযুদ্ধের পর আর দেখিনি আমরা। তারা একনায়কতন্ত্রকে একটি সেবা হিসেবে বিশ্বব্যাপী রফতানি করতে চায়। এ কারণেই বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া ও মিয়ানমারের স্বৈরাচারি শাসকরা মস্কো ও বেইজিংয়ে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের পেয়েছে।’
‘বৈশ্বিক হানাদারদের মুখোমুখি হতে’ বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, অস্ট্রেলিয়া, ইসরাইল, ভারত, জাপান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো মিত্রদের সাথে পশ্চিমের কাজ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ট্রাস বলেন, ‘এখন মুক্ত বিশ্বের তাদের নিজেদের মাঠে দাঁড়ানোর সময়।’ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে একটি উত্তেজনাপ্রবণ অভিজাতদের দ্বারা গঠিত দুর্নীতিপরায়ণ স্বৈরাচারী শাসন কবলিত দেশ হিসেবে বিবেচনা করে। যারা ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে এবং বিদেশে উচ্চপর্যায়ের গোয়েন্দাগিরি ও হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে। রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, পশ্চিম বিভক্তির গোলাকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে, রুশভীতিতে আক্রান্ত হয়েছে আর কী করতে হবে তা নিয়ে মস্কোকে লেকচার দেয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই। চীন বলেছে, পশ্চিম এখনো মনে করছে ঔপনিবেশিক আমলের মতো তারা বিশ্বজুড়ে দাদাগিরি করতে পারবে আর বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়াই বেইজিং তার নিজের পথে চলতে পারবে। ইউক্রেন নিয়ে চলতে থাকা উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়ার তার প্রতিবেশী দেশটিতে আক্রমণ চালালে তারা কী করবে তাই নিয়ে কাজ করছে পশ্চিমা দেশগুলো।
ট্রাস পুতিনকে সতর্ক করে ‘বড় ধরনের কৌশলগত ভুল করার আগেই’ ইউক্রেইন থেকে সরে আসার ও নিবৃত্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ‘ক্রেমলিন ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আক্রমণের মাধ্যমে শুধু ভীষণ বেকায়দায় পড়া হয় ও জীবনহানি হয়, যেমন হয়েছিল সোভিয়েত-আফগানিস্তান যুদ্ধে ও চেচনিয়ার সঙ্ঘাতে। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ১৫ হাজারেরও বেশি সোভিয়েত সেনা প্রাণ হারিয়েছে, একই সময় কয়েক লাখ আফগান নিহত হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে আন্তর্জাতিক সামরিক জোটের সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সেনার মৃত্যু হয়। এই সময়ে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের যুদ্ধকবলিত এলাকাগুলোতে প্রায় দুই লাখ ৪১ হাজার লোক নিহত হয়।