তাইওয়ান-ইউক্রেন: চীন-রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র লড়াই
বিশাল ইউরেশিয়ার নিস্তব্ধতা যুদ্ধের দামামায় মুখরিত এখন। পশ্চিম ফ্রন্টে, রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের নিকটবর্তী অঞ্চলে সামরিক ইউনিট, মিসাইল ও ট্যাঙ্ক বহর মোতায়েন হয়েছে। অস্থির মানুষ যুদ্ধ ভয়ে। শীতের প্রকোপ যেমন বাড়ছে তেমনি খাবার সরবরাহ জটিলতর হচ্ছে। এর মধ্যে যুদ্ধ বাধলে নানাবিধ দুর্দশায় আক্রান্ত হবে ইউক্রেন ও আশপাশের মানুষ। অপর দিকে, তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অবস্থানও বিস্ফোরণোন্মুখ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, সিপিসি চীনের মূল ভূখণ্ড দখল করে নেয় কিন্তু চিয়াং কাইশেকের জাতীয়তাবাদীদের নির্মূল করতে পারেননি। এরা তাইওয়ানে ও কিছু ছোট ছোট দ্বীপে চলে যায়। তখন এসব এলাকা সিপিসির শাসনের আওতার বাইরে ছিল। চীন ‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে’ তাইওয়ানকে সংযুক্ত করতে চায়। চীনবিরোধী একটি পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে ব্যবহার করতে চায়। দক্ষিণ চীন সাগর ও চীনকে চাপে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিবিধ কৌশলগত ও সামরিক বিষয়কে সজ্জিত করে চলেছে। চীন তাইওয়ানকে একত্রীকরণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করে অগ্রসর হচ্ছে কিন্তু এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় যদি তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তবে চীন সাথে সাথে আক্রমণ করে তা দখল করবে এমন অবস্থা এখন বিরাজমান। তাইওয়ান প্রণালী যেকোনো সময় যুদ্ধের ময়দানে পরিণত হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ দীর্ঘ দিন ধরে ‘এক চীন’ নীতি বজায় রেখেছে। তাইওয়ানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু দ্বীপটির সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও অন্যান্য চ্যানেলের মাধ্যমে অনেক দেশ বাণিজ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তাইওয়ান অত্যাধুনিক মাইক্রোচিপ উৎপাদনে এখন বিশ্বনেতা। তাইওয়ানের চীনা সমাজ গণতান্ত্রিক হতে পারলে, হয়তো এই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি চীনের বাকি অংশে একদিন প্রসারিত হবে।
ইউরেশিয়ার অপর প্রান্তে, ইউক্রেন পরিস্থিতি তাইওয়ানের পরিস্থিতি থেকে আলাদা, অন্তত এ কারণে নয় যে, রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের দখল এবং ক্রিমিয়ার সংযুক্তিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নিন্দিত হয়। মাত্র ১১টি দেশ ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল।
পুতিন মনে করেন, ইউক্রেন বা বেলারুশীয় সার্বভৌমত্ব ক্রেমলিনের চূড়ান্ত কর্তৃত্বের অধীনে রাশিয়ার সাথে এক সাথে অর্জন করার বিষয়। পুতিনের ‘সংশোধনবাদ’ অনেক সুদূরপ্রসারী। তিনি সোভিয়েত সংবিধানের অধীনে ইউক্রেনের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন মর্যাদার সমালোচনা পর্যন্ত করেছিলেন। পুতিনের কৌশলগত উদ্দেশ্য হলোÑ তিনি ইউক্রেনের স্বাধীনতাকে এখন অসহনীয় মনে করছেন, তিনি সম্ভবত সোভিয়েত ইউনিয়ন বা সোভিয়েত ‘স্বাধীন স্টেটস’ ইউনয়নে ফিরে যেতে চান।
তাইওয়ানকে চীনের সাথে সংযুক্ত করার জন্য চীনের বিভিন্ন কৌশল নকশা করা আছে। রাশিয়া তার সামরিক বাহিনীকে ইউক্রেন আক্রমণ এবং জয় করার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে প্রস্তুত ও সজ্জিত করছে। ক্রিমিয়া দখলের পাশাপাশি ক্রেমলিন ইতোমধ্যে ইউক্রেনে নিয়মিত সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে। ২০১৪ সালের আগস্টে এবং ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতেও এমন সেনা মোতায়েন হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, এবার পুতিন বড় ধরনের সেনা ‘পুশ’ করতে ইচ্ছুক।
সমালোচকরা মনে করেন, তাইওয়ানে চীনা সামরিক অধিগ্রহণ পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আমূল পরিবর্তন করবে না, তেমনি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অধিগ্রহণ ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে বিঘিœত করবে না। পুতিন তাইওয়ান প্রশ্নে বারবার চীনকে সমর্থন দিয়েছেন। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে চীন কঠোরভাবে নীরব। অনেকে আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্য, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে বর্তমান ‘বিশ্ব শান্তির পরিবেশ’ বিনষ্ট হবে।
চীনের তাইওয়ান আক্রমণ এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ করা বিশাল ভুল হবে, কেননা এতে বৃহত্তর সামরিক সঙ্ঘাতের ঝুঁকি বাড়বে এবং যুদ্ধ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসারিত হবে। জাপান ও ভারতের মতো দেশগুলো প্রায় নিশ্চিতভাবে চীনকে প্রতিহত করার জন্য তাদের নিজস্ব সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেবে। অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ ও উৎপাদন দু’টি দেশে ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ইউরোপীয়রাও তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য আরো কৌশলী হবে এবং বৈশ্বিক সমর-রাজনীতির টেবিলে নতুন নতুন কার্ড ফেলবে। যুদ্ধের ড্রামগুলোর আওয়াজ বেশ স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে। কূটনীতির কাজ হলো, এসব কোলাহলের পটভূমিতে বিচরণ করে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করা। সেটি তেমন কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে।
উপরের আলোচনায় আমরা দেখেছি, ইউরোপ ও এশিয়ায় দু’টি বিপজ্জনক ফ্ল্যাশপয়েন্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনকে প্রকাশ্য সঙ্ঘাতে নিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন ও তাইওয়ানের সঙ্কট সমাধান করা যেতে পারে যদি সব পক্ষ অন্যদের বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থকে সম্মান জানায়।
বর্তমান ইউক্রেন সঙ্কট রাশিয়া এবং মার্কিন উভয়েরই অত্যাচারের ফল। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করা এবং ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এবং লুহানস্কে শিল্প কেন্দ্র দখলের মধ্যে রাশিয়া নিজের প্রভাবের পাখা মেলে দেয় এবং শক্তি, শিল্প ইনপুট এবং বাজারের জন্য ইউক্রেনকে নির্ভরশীল রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে একীভূত হতে চায়। সেই উদ্দেশ্যে ইউনিয়নের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ক্রেমলিন আশঙ্কা করছে যে, ইউক্রেনের জন্য ইইউ সদস্যপদ ন্যাটোতে যোগদানের একটি ধাপ মাত্র।
যুক্তরাষ্ট্রও অনেক প্রভাব ফেলেছে, ২০০৮ সালে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসন ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই উসকানিমূলক প্রস্তাব মার্কিন মিত্রদের বিভক্ত করেছিল এবং ন্যাটো তবুও নিশ্চিত করেছে যে, ইউক্রেনকে সদস্য হিসেবে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। ২০১৪ সালে রাশিয়া সহিংসভাবে ক্রিমিয়াকে অধিভুক্ত করে। তখন তার একটি উদ্দেশ্য ছিল ন্যাটো যেন কখনোই রাশিয়ার ব্ল্যাক সি নৌ-ঘাঁটি এবং নৌ-বহরে ঢুকতে না পারে।
নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে যে আলোচনার বিষয়বস্তু প্রচারিত হয় তাতে দেখা যায়, ইউক্রেনে ন্যাটোর নীতির পরিবর্তন হচ্ছে। ইউক্রেনীয় এবং ন্যাটো কর্মকর্তারা উভয়েই মত প্রকাশ করেছেন, ইউক্রেন যেকোনো সময় ন্যাটোতে যোগদান করে পূর্ণ সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারে। তবুও, একজন উচ্চপদস্থ এস্তোনিয়ান সংসদ সদস্য সতর্ক করেছেন যে, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টি ১৯৩৮ সালে ব্রিটেনের হিটলারকে তুষ্ট করার মতো।
পেন্টাগন মনে করে, ইউক্রেনের কোনো সামরিক জোট বেছে নেয়ার অধিকার রয়েছে। এই অবস্থানটি প্রথম ১৮২৩ সালের মনরো মতবাদে প্রকাশ করা হয়েছিল এবং মার্কিন হিংসাত্মক প্রতিক্রিয়ায় ১৯৫৯ সালের কিউবান বিপ্লবের পর ফিদেল কাস্ত্রোর সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে ফিরে যাওয়াকে মনে করিয়ে দেয়। তারপর, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার ঘোষণা করেছিলেন, ‘কিউবাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে একটি হাতিয়ার হিসেবে হস্তান্তর করা হয়েছে।’ তিনি সিআইএকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আক্রমণের পরিকল্পনা তৈরি করার। ফলে পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সঙ্কটের জন্ম দেয়। তবে এটাও সঠিক যে, ছোট দেশগুলো ঝট করে সামরিক জোট বেছে নিতে পারে না, কারণ এ ধরনের পছন্দ তাদের প্রতিবেশীদের জন্য নিরাপত্তা ইস্যু সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, সোভিয়েত ক্রোধকে উসকে দেয়া হবে এই ভেবে, অস্ট্রিয়া এবং ফিনল্যান্ড উভয়েই ন্যাটোতে যোগদান না করে তাদের স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধি সুরক্ষিত করতে পেরেছিল। ইউক্রেনের জন্যও আজ একই বিষয় সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কর্মকর্তাদের বিচক্ষণতা সঙ্কটের সমাধান দিতে সহায়ক হতে পারে।
তাইওয়ানের সমস্যাও একই রকম। এক চীন নীতির ধারণা অনুসারে, তাইওয়ানের শান্তি ও গণতন্ত্রের অধিকার রয়েছে। রিচার্ড নিক্সন এবং মাও সেতুংয়ের সময় থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের সম্পর্কের ভিত্তি এমনই চলে আসছে।
তাইওয়ানের প্রতি একতরফা সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে চীনকে সতর্ক করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, চীনের সামরিক পদক্ষেপ বিশ্ব নিরাপত্তা এবং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। তবুও, ইউক্রেনের যেমন ন্যাটোতে যোগদানের সীমাহীন সমস্যা, তেমনি তাইওয়ানেরও চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াতেও হাজারো সমস্যা এবং বিশ্ব শান্তি ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, তাইওয়ানের কিছু রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে তালগোল পাকাচ্ছেন এবং কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদ ‘এক চীন’ নীতির সাথে স্বাধীনতার কথাও বলছেন! ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে পশ্চাদপসরণ শুরু করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমি এক চীন নীতি পুরোপুরি বুঝতে পারি, কিন্তু আমি জানি না, কেন আমাদের এক চীন নীতিতে আবদ্ধ হতে হবে যদি না আমরা চীনের সাথে বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ে চুক্তি করি।’
এরপর জো বাইডেন উসকানিমূলকভাবে গত মাস ডিসেম্বরে গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলনে তাইওয়ানকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জাতিসঙ্ঘের ব্যবস্থায় তাইওয়ানের ‘দৃঢ় অংশগ্রহণের’ প্রতি সমর্থন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপ চীনের সাথে উত্তেজনাকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েকটি বিষয়ে চীন ‘রেড লাইন’ এঁকে দিয়েছে।
আবার, মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা যুক্তি দেন যে, তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা করার অধিকারের পথে রয়েছে; আমেরিকার তার নিজস্ব ইতিহাসের আলোকে সেটিকে বিশ্লেষণ করা উচিত। এভাবেই ঘুমন্ত ড্রাগনকে তাপ দেয়া হচ্ছে। চীনও ক্যালিফোর্নিয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে, মার্কিন সরকার সেটি সহ্য করছে না। যুক্তরাষ্ট্র চিন্তা করেনি, চীন এত তাড়াতাড়ি বৈশ্বিক রাজনীতিতে খেলা শুরু করবে।
তাইওয়ানে সামরিক ইস্যু বৃদ্ধির ঝুঁকিগুলো নিয়ে সম্প্রতি ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ ঘোষণা দেন, ন্যাটো জোট চীনকে মোকাবেলা করতে পারে। যদি তেমনটি হয়, তবে তাইওয়ান পরিস্থিতি আরো জটিলতার সৃষ্টি করবে।
মার্কিন সিনেট গত ১৫ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট এর একটি সংস্করণের পক্ষে ভোট দিয়ে ৭৭৮ বিলিয়ন প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অনুমোদন দেয় যা আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এটি ৩৬৩-৭০ ভোটে, সিনেট ৮৯-১০ ভোটে পাস করেছে।
২০২২ সালে এ আইন ইউক্রেন নিরাপত্তা সহায়তা উদ্যোগের জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার রেখেছে। ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনীকে সহায়তা প্রদানকারী রাশিয়ার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর মারাত্মক বিরোধ রয়েছে; ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা উদ্যোগের জন্য চার বিলিয়ন ডলার এবং বাল্টিক সুরক্ষা সহযোগিতার জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করেছে। চীনের বিষয়ে, বিলে প্যাসিফিক ডিটারেন্স ইনিশিয়েটিভের জন্য ৭.১ বিলিয়ন এবং তাইওয়ানের প্রতিরক্ষার জন্য কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়া গেছে। সেই সাথে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে জোরপূর্বক শ্রম দিয়ে উৎপাদিত পণ্য ক্রয়ে প্রতিরক্ষা বিভাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়াও, বিলে বলা হয়েছে- তাইওয়ান দ্বীপের নৌবাহিনীকে ২০২২ সালে পরিচালিতব্য, মার্কিন নেতৃত্বাধীন রিম অব দ্য প্যাসিফিক মহড়ায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর পক্ষে জোর দেয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সমর্থকরা যুক্তি দিয়েছিলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীকে এখন চীন এবং রাশিয়াকে মোকাবেলা করতে হবে। তারা বলছেন, চীন তার সামরিক বাজেট সাত গুণ বাড়িয়ে ২০৯ বিলিয়ন ডলারে তুলেছে। তারা বলছেন, মূল মূল্য আরো অনেক বেশিতে দাঁড়াবে, কেননা চীনে শ্রমিকদের কম বেতন ও সস্তা উপাদান পাওয়া যায়। বাইডেন চীনের বিরুদ্ধে একটি ‘এক মহাকৌশলকে’ বিকশিত করতে চান।
পশ্চিম ইউরোপকে অধুনালুপ্ত ইউরোপীয় শক্তির আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা এক জোটকে একটি এশিয়ান শক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট হিসেবে ব্যবহার করা কোনো যুক্তিতেই উচিত নয়।
ইউক্রেন এবং তাইওয়ান সঙ্কট শান্তিপূর্ণভাবে এবং সহজভাবে সমাধান করা উচিত। ন্যাটোর উচিত ইউক্রেনের সদস্যপদ পরিকল্পনার ছক থেকে তুলে নেয়া এবং রাশিয়ার উচিত যেকোনো আগ্রাসন পরিত্যাগ করা। ইউক্রেনকে তার বাণিজ্যনীতিগুলোকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য স্বাধীনতা দিতে হবে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নীতিগুলো মেনে চলতে হবে।
একইভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট করা উচিত যে, তারা অবিচলভাবে তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতার পক্ষালম্বন করবে না এবং ন্যাটোকে পুনর্গঠন করে চীনকে টার্গেট বানাবে না। চীনের উচিত তাইওয়ানের বিরুদ্ধে একতরফা সামরিক পদক্ষেপ ত্যাগ করা এবং দ্বি-ব্যবস্থার নীতিকে পুনঃনিশ্চিত করা, যা হংকংয়ের ক্র্যাকডাউনের পরে আসন্ন হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে অনেক তাইওয়ানি বিশ্বাস করেন।
শান্তির কোনো বৈশ্বিক কাঠামো স্থিতিশীল ও নিরাপদ হতে পারে না যত ক্ষণ না সব পক্ষ অন্যের বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থকে স্বীকৃতি দেয়। এটি অর্জনের জন্য প্রধান শক্তিগুলোর জন্য সর্বোত্তম উপায় হলো, ইউক্রেন এবং তাইওয়ানের ওপর পারস্পরিক বোঝাপড়া সৃষ্টি এবং যুদ্ধাবস্থার উত্তাপ তাড়াতাড়ি কমিয়ে আনার পথ বেছে নেয়া।