এবার ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে কৃষক আন্দোলনের ডাক

0

ভারতের পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলোর মোর্চা। কৃষক আন্দোলনের নেতারা বলছেন, বিজেপি কৃষকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। দিল্লির সিংঘু সীমান্তে বৈঠকের পর সংযুক্ত কিষান মোর্চা (এসকেএম) গতকাল শনিবার রাতে বিজেপির প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে আবারও বিক্ষোভে নামার ঘোষণা দিয়েছে।

কৃষকনেতারা বলছেন, কৃষি আইন প্রত্যাহার ছাড়া অন্যান্য প্রতিশ্রুতির একটিও পূরণ করেনি বিজেপি। এর প্রতিবাদে এসকেএম উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরিতে ২১ জানুয়ারি নতুন আন্দোলন শুরু করছে। ৩১ জানুয়ারি সারা দেশে পালিত হবে ‘বিশ্বাসঘাতকতা দিবস’ হিসেবে।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গাড়ি চালিয়ে চারজন কৃষক ও এক সাংবাদিককে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছিল। উত্তর প্রদেশের ভোট আবহে কৃষক মোর্চা লখিমপুরকেই নতুন আন্দোলনের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিল।

এসকেএম নেতা হান্নান মোল্লা গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের ওপর ভরসা করে আমরা অবস্থান আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি সরকার ধোঁকা দিয়েছে। যে যে দাবি মানার কথা বলেছিল, একটাও পূরণ করেনি। একটা মামলাও প্রত্যাহার হয়নি। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি স্বীকৃতি দেওয়াসংক্রান্ত বিবেচনায় কমিটি এখনো গঠন করা হয়নি। আন্দোলনে নিহত কৃষকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি। লখিমপুর খেরিতে কৃষক হত্যার প্রধান ষড়যন্ত্রকারী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়নি। কাজেই আমরা নতুন করে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

হান্নান মোল্লা আরও বলেন, লখিমপুর-কাণ্ডে তদন্তে অপরাধীদের না ধরে উত্তর প্রদেশের পুলিশ বেছে বেছে কৃষকদের গ্রেপ্তার করছে। হেনস্তা করছে।

নতুন এই আন্দোলনের পাশাপাশি এসকেএম ঘোষণা করেছে, আসন্ন নির্বাচনে বিজেপিকে কোথাও একটি ভোটও দেওয়া চলবে না। এসকেএম নেতা দর্শন পাল সিং বলেন, এটাই তাঁদের ‘মিশন বিজেপি’।

গত বছরের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনেও এসকেএম বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার ডাক দিয়েছিল। সে কথা ব্যাখ্যা করে দর্শন পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল নই। রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই। কৃষকদের ভালোমন্দ ছাড়া অন্য কোনো লক্ষ্য আমাদের নেই। বিজেপির গৃহীত নীতি কৃষকদের সর্বনাশ ডেকে আনছে বলেই আমরা সরাসরি বিজেপির বিরোধিতা করছি।’

দর্শন পাল বলেন, ‘বিজেপির বিরোধিতা করলেও কৃষকদের আমরা কোনো বিশেষ দলকে ভোট দিতে আগেও বলিনি, এবারও বলছি না। বিজেপি বিশ্বাসঘাতক বলে তাদের ভোট না দেওয়ার ডাক দিয়েছি। বিজেপির বদলে কৃষকেরা কে কাকে ভোট দেবে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’

এদিকে এসকেএম নেতারা এ কথা বললেও জোটবদ্ধ থাকা কৃষক মোর্চায় ভাঙন ধরিয়েছে ভোটের রাজনীতি। পাঞ্জাবে ছোট-বড় কয়েকটি সংগঠন ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই ভাঙন সম্পর্কে হান্নান মোল্লা বলেন, পাঞ্জাবে যা হয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। কোনো কোনো সংগঠনের নেতার মধ্যে কৃষক চরিত্র ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক সত্তা। তাঁরা হয়তো মনে করছেন, নির্বাচনে জিতে আইনসভার সদস্য হলে সুবিধা হবে। পাঞ্জাব ছাড়া উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড বা অন্যত্র এই মানসিকতা দেখা যায়নি।

হান্নান মোল্লা বলেন, ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত যাঁরা নিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে এসকেএমের আর কোনো সম্পর্ক নেই। উত্তর প্রদেশসহ অন্য ভোটমুখী রাজ্যে ইতিমধ্যেই ‘নো ভোট টু বিজেপি’ বার্তা চলে গেছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই প্রচারের মাত্রা তীব্রতর হবে।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করেন। ৯ ডিসেম্বর মোর্চাকে চিঠি লিখে কৃষকদের অন্যান্য দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সরকারের সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১১ ডিসেম্বর কৃষকনেতারা বৈঠক করে আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন ও দিল্লির তিন দিকের সীমান্ত ছেড়ে চলে যান। কিন্তু এখনো তাঁদের সব প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। দর্শন পাল জানিয়েছেন, শ্রমিক ও কৃষকদের স্বার্থে দেশের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এসকেএম ওই ধর্মঘটে শামিল হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com