ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
পিয়ংইয়ংয়ের সর্বশেষ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন প্রশাসন বুধবার উত্তর কোরিয়ার পাঁচজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ ঘোষণা করেছে যে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি প্রাপ্তিতে উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তাদের ভূমিকার কারণে তাদের ওপর শাস্তি আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ উত্তর কোরিয়ার আরো এক ব্যক্তি, এক রাশিয়ান ব্যক্তি এবং একটি রাশিয়ান কোম্পানি, যারা এই গণবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে সহায়তা দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের দ্বারা টার্গেট করা পাঁচজন উত্তর কোরিয়ার মধ্যে একজন রাশিয়ায় অবস্থান করছে, অন্য চারজন চীনে অবস্থান করছে। সকলের বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেকেন্ড একাডেমি অফ ন্যাচারাল সায়েন্সে অর্থ, পণ্য বা পরিষেবা প্রদানের অভিযোগ রয়েছে, যা ট্রেজারি বিভাগ বলে যে দেশটির সামরিক প্রতিরক্ষা কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে উত্তর কোরিয়া আজ বুধবার ঘোষণা করেছে, দেশটির সর্বশেষ উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্র আরেকটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের উপস্থিতিতে এই ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে বুধবার দাবি করে দেশটি।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা যায় চামড়ার জ্যাকেট পরিহিত কিম জং উন বাইনোকুলারের সাহায্যে মঙ্গলবার ওই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা প্রত্যক্ষ করছেন। ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার (৬২১ মাইল) দূরে সমুদ্রে ভাসমান লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানানো হয়। এখন পর্যন্ত পরীক্ষিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে এই হাইপারসনিকটি সর্বাধিক গতিসম্পন্ন। অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য মতে, মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্রটি ৭০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে, যদিও সেটি আগের তুলনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন।
মঙ্গলবার পরীক্ষিত এই ক্ষেপণাস্ত্রটির গতি ঘণ্টায় শব্দের গতির ১০ গুন বলে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে দেশটির ইয়োনহাপ সংবাদ মাধ্যম। গত সপ্তাহে উৎক্ষেপিত মিসাইলটির গতি ছিল শব্দের গতির ছয় গুন।
চলতি বছরে এটি উত্তর কোরিয়ার দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। গত সপ্তাহের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর দক্ষিণ কোরিয়া দাবি করে, উত্তর কোরিয়া তাদের সক্ষমতার বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করছে। উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি বিশ্লেষণ করে মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্রটির সাথে গত সপ্তাহের ক্ষেপণাস্ত্রের সামঞ্জস্য দেখা গেছে।
যদিও, গত সপ্তাহের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর, বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, উত্তর কোরিয়ার পরীক্ষিত ক্ষেপণাস্ত্রটি হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল (এইচজিভি) নয়, বরং অপেক্ষাকৃত কম উন্নত ম্যানিউভারেবল রিএন্ট্রি ভেহিকল (মাআরভি) মিসাইল।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা আরো বলেন, হাইপারসনিক শব্দটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। প্রচলিত সব ক্ষেপণাস্ত্রই এখন হাইপারসনিক গতিতে চলে। হাইপারসনিক গতি অর্থ শব্দের গতির পাঁচ গুণ।
গত সপ্তাহের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় উপস্থিত না থাকলেও, মঙ্গলবারে উপস্থিত ছিলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। তাঁর এই উপস্থিতিকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
‘দীর্ঘদিন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সময় অনুপস্থিত থাকার পর হঠাৎ কিমের এই আবির্ভাব যথেষ্ট রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে’, বলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইওহা বিশবিদ্যালয়ের অধ্যাপক লেই এরিক ইজলি।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এই অস্ত্র মহড়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
‘এটি ভুল বার্তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন শুরু থেকেই যেকোনো আলোচনার জন্যে আহ্বান জানিয়ে আসছে। আমরা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কোভিড, মানবিক সাহায্যের বিষয়ে আলোচনায় বসতে চাই। আর তারা কিনা ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া করছে,” বলেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনৈতিক সহকারী সচিব ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকিও এই উৎক্ষেপণকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের লংঘন বলে নিন্দা করেছেন। তিনি উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানান। এই আলোচনা উত্তর কোরিয়া ২০১৯ সালে পরিত্যাগ করেছিল।
অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া বারবার যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে আসছে। উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন যতক্ষণ না তাদের ‘শত্রুভাবাপন্ন নীতি’ পরিহার করবে ততক্ষণ কোনো আলোচনায় বসবে না তারা। দেশটি বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে তাদের সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও জানিয়ে আসছে।
১৯৫০ সালে সংঘটিত কোরিয়ান যুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৮ হাজার সেনা এখনো দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করছে। উল্লেখ্য, শান্তি চুক্তির পরিবর্তে কোরিয়ান যুদ্ধের অবসান হয় সন্ধির মাধ্যমে।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা