চীনের কাছে ঋণ পরিশোধের কাঠামো পুনর্বিন্যাস দাবি করেছে শ্রীলঙ্কা
আর্থিক সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা। তার ওপর চীনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণের ঋণ রয়েছে কাঁধের ওপর। সেই ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধ কাঠামো পুনর্বিন্যাসের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। তিনি বলেছেন, দেশের আর্থিক অবস্থা ক্রমাবনতিশীল। এ অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশকে টেনে তুলতে চীনকে এটুকু করতে হবে। রোববার সফররত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ অনুরোধ করেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
গত এক দশকে সড়ক, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের কাছ থেকে কমপক্ষে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে চীন।
সরকারের দাবি, এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে উৎপাদনশীল খাতে। দেশের উন্নয়নে। কিন্তু সমালোচকরা বলেন ভিন্ন কথা। তারা মনে করেন, খুবই কম রিটার্ন বা রাজস্ব আসবে এমন অপ্রয়োজনীয় স্কিমে ব্যয় করা হয়েছে এই অর্থ।
প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের অফিস থেকে বলা হয়েছে, ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট দাবি তুলে ধরেছেন যে, যদি ঋণ পরিশোধ কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হয়, যদি ঋণ পরিশোধ কাঠামো পরিবর্তন করা হয় তাহলে তা হবে তার দেশের জন্য এক বড় স্বস্তি। তার দেশ সবেমাত্র করোনা মহামারি থেকে জেগে উঠছে। এ অবস্থায় চীন তাদেরকে এতটুকু সহায়তা করলে তা হবে আর্থিক সঙ্কটে এক বড় সমাধান। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, চীনা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াত দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গত বছর এই আমদানি ছিল ৩৫০ কোটি ডলারের। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি।
প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে চীনের প্রতি আরো আহ্বান জানান, তারা যেন চীনা পর্যটকদের শ্রীলঙ্কা আসার অনুমতি দেয়। এক্ষেত্রে তারা করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ মেনে চলবে। করোনা মহামারির আগে শ্রীলঙ্কার বড় আয়ের উৎসই ছিল চীনা পর্যটক। তারা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে চীনা পণ্য সবচেয়ে বেশি আমদানি করে। কয়েক মাসে মারাত্মক ঋণ সঙ্কট এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে সঙ্কটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারিতে পর্যটক কমে যাওয়ায় এ অবস্থা ত্বরান্বিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।
শ্রীলঙ্কায় চতুর্থ সর্ববৃহৎ ঋণদাতা হলো চীন। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অর্থ বাজার বলে পরিচিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং জাপানের পরেই রয়েছে চীন। দেশটি চীনের কাছ থেকে শত শত কোটি ডলার সফট ঋণ নিয়েছে। কিন্তু সেখানে বৈদেশিক বিনিময় সঙ্কট গ্রাস করেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন এতে দেশটির অবস্থা আরো সঙিন হয়েছে। এ বছর শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বার বার বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছে যে, সব ঋণ পরিশোধ করা হবে। এ মাসে বন্ডের বিপরীতে যে অর্থ পরিশোধ করা হবে, তা এরই মধ্যে বরাদ্দ হয়েছে।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার শ্রীলঙ্কা। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বাকি বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে অর্থ ঋণ এবং অবকাঠামো নির্মাণে যুক্ত হয়েছে চীন। কিন্তু চীনের এ উদ্যোগকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশ ঋণের ফাঁদ হিসেবে দেখছে। এমনটা হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলোর সঙ্গে। বরাবরের মতোই এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে বেইজিং। তাদের বিরুদ্ধে এমন প্রচারণা চালিয়ে চীনের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে পশ্চিমারা- এমন কথা বলছে চীন।