মুক্তির জন্য তরুণদের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে : জেনারেল ইব্রাহিম
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীর প্রতীক) বলেছেন, আজ নতুন প্রজন্মকে দেশের কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুলনীতি হচ্ছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার। ১৯৭১ পূর্ব সময়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রে এই তিনটি বিষয় অনুপস্থিত ছিল বলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। অথচ আজ বিজয়ের ৪৮ বছরেও আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো এই মুলনীতিগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। অন্যায়ের প্রতিবাদের ক্ষেত্র আমরা এখনো সমালোচনা বা মৌখিক প্রতিবাদের পর্যায়ে রয়েছি। অথচ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই অবস্থা থেকে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তাই জাতির মুক্তির জন্য নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং তরুণদেরকে এই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অবিলম্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও আবুল আসাদের মুক্তি দিতে হবে।
আজ রোববার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ‘জহুর হোসেন চৌধুরী হলরুমে’ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘বিজয়ের ৪৮ বছরে আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহঃ সাধারণ সম্পাদক ও ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক মহাসচিব এম. এ আজিজ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব এম. আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহঃ সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বাতেন, অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন প্রমুখ।
এম. এ আজিজ বলেন, আইন অমান্য করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে কালা কানুন তৈরি করে সাংবাদিকদের হাত ও পা বেঁধে ফেলা হয়েছে। এই কালা-কানুনের মাধ্যমে আবুল আসাদকে নির্যাতন করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর গণতন্ত্রের স্বাধীনতা নির্ভর করছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে গনতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে।
এম. আব্দুল্লাহ বলেন, স্বাধীনতার অর্জন হচ্ছে বিচারের নামে দেশপ্রেমিক নেতৃত্বকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করা। স্বাধীনতার অর্জন হচ্ছে প্রতিনিয়ত মা-বোনের ইজ্জত হরন করা, ব্যাংক লুট হচ্ছে, বাক স্বাধীনতা হরন করা হয়েছে। বিজয়ের ৪৮ বছরের অর্জন দেশে গুম-খুনের মহোৎসব হচ্ছে, এমনকি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল পর্যায়ের মানুষকে গুম করা হয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নাই, ৮০ বছরের প্রবীণ লেখক, কলামিস্ট, সম্পাদক আবুল আসাদকে সন্ত্রাসীরা তার কার্যালয় থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে অথচ পুলিশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে তাকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কারাগারে প্রাপ্ত ডিভিশনকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মামলার বোঝা নিয়ে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে। ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান সহ সরকার পন্থী সম্পাদকদেরকেও নির্যাতন করা হচ্ছে। অবিলম্বে এই সকল সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং গ্রেফতারকৃত সম্পাদক আবুল আসাদকে মুক্তি দিতে হবে।
অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার দেশে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে। আজ দেশের জনগণের মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। মানাধিকার কেউ দেয় না তা আদায় করে নিতে হয়। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করতে হবে। বাংলাদেশে আইন বিভাগ স্বাধীন নয়। বর্ষীয়ান সাংবাদিক দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা তার অবিলম্বে মুক্তি দাবী করছি।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ব্যবসা করছে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননার স্বর্ণ চুরি করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বিরোধী মত ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী ও নির্যাতন করছে। আজকে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর চরম নির্যাতন করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বর্ষীয়ান সাংবাদিক আবুল আসাদকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে।
শহীদুল ইসলাম বলেন, আজ বিজয়ের ৪৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল হতে বঞ্চিত। মানুষের ঘরে ঘরে বিজয়ের প্রকৃত স্বাদ পৌছিয়ে দিতে আবারো একটি মুক্তি সংগ্রামের প্রয়োজন। এই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।