গরিব পাচ্ছে না টিকা, ধনী পাচ্ছে বুস্টার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন বিশ্বের মোট করোনা টিকার ২০ শতাংশ বুস্টার কিংবা অতিরিক্ত ডোজ হিসেবে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ পাঁচ ডোজের এক ডোজ চলে যাচ্ছে বুস্টারে।
মাস কয়েক আগে ডাব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসাস একটি আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশের অন্তত ৪০ শতাংশ জনগণ করোনার অন্তত এক ডোজ টিকা না পাওয়ার আগে যেন কোনো দেশ টিকাপ্রাপ্ত ও স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের বুস্টার না দেন। তিনি জানান, এখনও আফ্রিকার চারজন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে তিনজনই টিকা পাননি।
জাতিসংঘের সংস্থা ডাব্লিউএইচও অনেকদিন ধরেই টিকাদান কর্মসূচিতে বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার। তাদের যুক্তি, করোনা ভাইরাসকে কিছু জায়গায় ইচ্ছেমত ছড়ানোর সুযোগ দিলে নতুন ও আরও মারাত্মক সংস্করণ তৈরির সুযোগ হয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করা সংস্থা গ্লোবাল চেঞ্জ ডাটা ল্যাবের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’ প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্বের ৫৭ শতাংশ মানুষ করোনার অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। কিন্তু নিম্ন আয়ের দেশে বাস করা মাত্র ৮.১ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন।
টিকাদান ক্ষেত্রে এমন বৈষম্যের মধ্যেই ওমিক্রন সংস্করণের আগমন ঘটায় সামর্থ্যবান দেশগুলো বুস্টার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে এখন পর্যন্ত ১২০টির বেশি দেশ বুস্টার কিংবা অতিরিক্ত ডোজ টিকা দেয়া শুরু করেছে, যার একটিও কম আয়ের দেশ নয়।
বুস্টার কেন প্রয়োজন?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (এমা) জানিয়েছে, বর্তমানে যে টিকাগুলো আছে সেগুলো ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ঠিক কতটা কার্যকর সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
তবে ওমিক্রনকে পরাস্ত করতে বর্তমান টিকাগুলোর সামর্থ্যে ঘাটতি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সংস্থার ভ্যাকসিন স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান মার্কো কাভেলারি। বুস্টার ডোজ সেই ঘাটতি কিছুটা পূরণ করতে পেরেছে বলেও জানান তিনি। ওমিক্রনের সঙ্গে লড়তে বর্তমান টিকাগুলোতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে কিনা, এই প্রশ্ন করা হলে এমার প্রধান নির্বাহী পরিচালক এমার কুক বলেন, ‘এর কোনো উত্তর নেই।’
গরিব দেশের টিকার ব্যবস্থা যেভাবে হচ্ছে
বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশ কোভ্যাক্সের টিকার উপর নির্ভরশীল। করোনার টিকার ব্যবস্থা করতে নেওয়া বৈশ্বিক একটি উদ্যোগ হচ্ছে কোভ্যাক্স। শুরুতে এই উদ্যোগের আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে দুইশ কোটি ডোজ টিকা বিতরণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে সেটা কমিয়ে ১৪০ কোটি ডোজ করা হয়। টিকা রপ্তানিতে বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা, উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ ও অনুমোদন দেয়ার ধীর গতি ইত্যাদি কারণে লক্ষ্যমাত্রা কমাতে বাধ্য হয় কোভ্যাক্স। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৪ কোটি ডোজ টিকা দিতে পেরেছে কোভ্যাক্স।
গত জুনে শিল্পোন্নত সাত দেশ গরিব দেশগুলোকে একশ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার অঙ্গীকার করেছিল। সেটা সরাসরি নির্দিষ্ট কোনো দেশে প্রেরণ কিংবা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে দিতে চেয়েছে তারা।