‘সুষ্ঠু’ ভোটে নিহত ৩, আহত দেড় শতাধিক

0

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মহলের তীব্র সমালোচনার মধ্যেই গতকাল রোববার চতুর্থ ধাপেও ব্যাপক আওয়ামী সহিংসতা দেখা গেছে। ঠাকুরগাঁওয়ে ভোটকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। সিলেট ও পটুয়া খালিতে গুলিতে আরো দু্ই জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, জাল ভোট ও অনিয়মের অভিযোগে প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জন এবং পোলিং এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের মতো নানা ঘটনায় এ ধাপে দেশের ৮৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। অধিকাংশ ঘটনায় জড়িত স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের প্রর্থীরা।

এর আগে দ্বিতীয় ধাপে ৬ জন ও তৃতীয় ধাপে নির্বাচনের দিন সহিংসতায় নিহত হয়েছিলেন ৭ জন। এ নিয়ে সারা দেশে নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছেন ৭০ জন।

এদিকে রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচন শেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানিয়েছেন চতুর্থ ধাপে ৮৩৬ ইউনিয়ন পরিষদে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। দিনভর ভোটকেন্দ্রে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

ইসি সচিব বলেন, প্রায় ৫৮টি জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়েছি। সবকিছু মিলে নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও আনন্দমুখর পরিবেশে হয়েছে। এতে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল। ভোটারদের উপস্থিতিও আমরা আশা করছি ৭০ শতাংশের বেশি হবে। ভোটগ্রহণ করতে গিয়ে ১৫টি ভোটকেন্দ্র প্রিসাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় ওই সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে।

হুমায়ুন কবীর বলেন, ভোটগ্রহণকারী ২৯ জন আহত হয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৬৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

‘বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া সব মিলিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’ বলেও জানিয়েছেন ইসি সচিব।

ভোটে বিভিন্ন স্থানে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও বোমা-ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে বেধেছে সংঘর্ষ।

সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশ কয়েক জায়গায় গুলিবর্ষণ করতে হয়েছে।

ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ ও যশোরে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। সংঘর্ষে প্রার্থীসহ ১৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে। সহিংসতা ও অনিয়মের অভিযোগে পুলিশ প্রায় ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ কয়েক স্থানে কেন্দ্র দখলের পর ভোট স্থগিত করা হয়। চট্টগ্রাম, জয়পুরহাট ও চুয়াডাঙ্গায় নির্বাচন বর্জন করেছেন কয়েক প্রার্থী। অবশ্য ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার দাবি করেছেন, মানুষ আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে।

এদিন ৫৮টি জেলার ১১৮টি উপজেলায় ভোট হয়েছে। তবে প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, আগের ধাপগুলোর তুলনায় গতকাল প্রাণহানি কম হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে অবশ্য ভোটের পরই সাধারণত বেশি সহিংসতা হয়। নির্বাচনী সহিংসতায় এর আগে অন্তত ৮৮ জনের মৃত্যু এবং শত শত লোক আহত হয়েছেন।

গতকাল ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের গুলিতে হামিদুল ইসলাম (৬০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় আবুল কালাম নামে আরও একজন আহত হন। সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের আসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার সময় মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্র ঘেরাও করলে পুলিশ গুলি ছুড়লে এ ঘটনা ঘটে। হামিদুল দক্ষিণ আসাননগর এলাকার বাসিন্দা। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীরুল ইসলাম।

সিলেটের গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বইটিকট এলাকায় গোলাগুলিতে আবদুস সালাম নামের একজন নিহত হয়েছেন বলে তার ছেলে জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন। নিহতের বাড়ি লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামপায়। নিহতের ছেলে জানান, ফলাফল ঘোষণার পর দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবদুস সালাম।

প্রতিনিধিরা জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্রগুলোতে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পেরেছেন। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক।

ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, যশোরে ব্যাপক সহিংসতা; বহু গ্রেপ্তার:

ভোলার বোরহারনউদ্দিন ও তজুমদ্দিনে বোমা ফাটিয়ে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটারদের বাধা দেওয়া ও এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে অন্তত ১০ জনকে। ভাঙচুর করা হয়েছে সমর্থকদের ঘরবাড়িও। নির্বাচনী আচরণবিধি অমান্য করায় বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আটক ও জেল-জরিমানা করা হয়েছে ১০ জনকে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেলে হাসাননগর ইউনিয়নের নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা মির্জাকালু হাইস্কুল কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও ধারালো অস্ত্রসহ কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী জসীম হাওলাদারের সমর্থকরা জড়িয়ে পড়লে ত্রিমুখী সংঘর্ষ ঘটে। কেন্দ্রের পাশে বিকট শব্দে ১০টি বোমা বিস্ফোরণ হয়।

সহিংসতায় অংশ নেওয়া অনেকের হাতে রামদাসহ ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। প্রায় আধঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। হামলায় অংশ নেওয়ায় একজনকে আটক করা হয়।

বোরহানউদ্দিনের দেউলা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবুলের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে নৌকার প্রার্থী শাহাজাদা তালুকদারের সমর্থকরা। পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট মো. সবুজকে ৩৭ হাজার টাকাসহ আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও জব্দ করা টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।

কুমিল্লায় কয়েকটি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের ফাঁকা গুলি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পৃথক সংঘর্ষে অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের দেড়কোটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংঘর্ষে ৪ জন আহত হয়। পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কনকাপৈত ইউনিয়নের জগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বেলাল হোসেনের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভাইকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয় তারা।

বাতিসা ইউনিয়নের সোনাপুর কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে চারজন আহত হয়েছে। চিওড়া ইউনিয়নের সাঙ্গিশ্বর কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে পুলিশের রাবার বুলেটে চারজন আহত হয়। মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ছাতিয়ানী, দেড়কোটা, শুভপুর ইউনিয়নের ধনিজকরা ও গুণবতী ইউনিয়নের রামপুর ও গুণবতী কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ম্ফোরণের ঘটনায় ১৪ জন আহত হয়েছে।

জেলার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের শালধর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হয়। এ উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের আলেখারচর দারুসসুন্নাত মাদ্রাসা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায় বহিরাগতরা। এ সময় পুলিশ ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদার দাবি করেন, ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া জেলার তিনটি উপজেলায় শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে সহিংসতায় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও এক পুলিশ সদস্যসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩০ জন। পুলিশ সদস্য জাবেদ ও কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নুর মোহাম্মদকে গুরুতর আহত অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সদর উপজেলার দক্ষিণ চররমণী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট বন্ধের প্রায় এক ঘণ্টা আগে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় ২০ জন আহত হয়।

স্থানীয়রা জানান, জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলার চররমণী মোহন ইউপির দক্ষিণ চররমণী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী খোরশেদ আলমের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে চৌধুরী মাঝির। এতে উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়। সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নে প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে।

প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থী আইনুল আহাম্মেদ তানভীনের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। সংঘর্ষে আহত হন প্রিসাইডিং অফিসার নুর মোহাম্মদসহ আরও ১০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ছাড়া বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়, ভবানীগঞ্জ, দত্তপাড়া, হামছাদী, চরশাহী, বশিকপুর ও শাকচর ইউনিয়নে। চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি এ কে ফজলুল হক সহিংসতার খবর নিশ্চিত করেন।

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ভোট গ্রহণ চলাকালে সাতপোয়া ইউনিয়নের চুনিয়াপটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরসরিষাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাটারা ইউনিয়নের ভেবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বারইপটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ১০-১৫ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া মহাদান ইউনিয়নের সেঙ্গুয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষ চলাকালে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে বাক্সটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।

যশোরের অভয়নগরে নির্বাচন চলাকালে দুটি কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ, পোলিং অফিসার, চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় সাতজনকে আটক করা হয়।

বাঘুটিয়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা জোর করে ভোট দিতে গেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিম উদ্দিনসহ তার সমর্থকরা বাধা দেন। এতে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিযন্ত্রণে আনে। এতে ভোটাররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেন। একপর্যায়ে ভোটকেন্দ্র ফাঁকা হয়ে যায়। দুই ঘণ্টা পর আবার ভোট শুরু হয়। হামলায় আজিম উদ্দিনসহ চারজন আহত হয়।

রাজশাহীতে সহিংসতার অভিযোগে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চারঘাটের শলুয়া ইউপির হলিদাগাছী ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা এক ব্যক্তিকে জামায়াত কর্মী দাবি করে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। এ সময় তারা দু’জনকে কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় চারঘাট উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বিপ্লবসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে রাজশাহী র‌্যাবের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জিয়াউর রহমান তালুকদার জানান।

জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কিসমতগনকৈড় ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আকবর আলী অভিযোগ করেন, আড়ইল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বহিরাগতদের নিয়ে দুপুরে জাল ভোট দেন। এ সময় স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া করলে সংঘর্ষ বাধে। এতে একজনের মাথা ফেটে যায়।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হাসান বলেন, নির্বাচনী নাশকতায় দুর্গাপুরে ২১ ও বাঘায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চারঘাটে অন্য একটি ঘটনায় চায়নিজ কুড়ালসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাব চারঘাট উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বিপ্লবসহ আটজনকে আটক করে চারঘাট থানায় সোপর্দ করেছে। তাদের কাছ থেকে হাঁসুয়া ও রামদা উদ্ধার করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নৌকায় প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আতকাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক মিয়ার সমর্থকরা ভোটারদের প্রকাশ্যে সিল মারার জন্য বাধ্য করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী লিটন মিয়ার এজেন্টরা বাধা দিলে দু’পক্ষে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০-২৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।

কটিয়াদীতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে দুটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। পরে একটি কেন্দ্র পুনরায় চালু হয়। জানা গেছে, জালালপুর ইউনিয়নের উত্তর চরপুক্ষিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান রুস্তম পরিদর্শনে এলে নৌকার প্রার্থী খালেক সরকার রাজুর সমর্থকরা তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। সংবাদ পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কেন্দ্র ভাঙচুর করে। আনসার, পুলিশ ও র‌্যাব ২৮ রাউন্ড গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর ওই কেন্দ্রটির নির্বাচন বন্ধ করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

চান্দপুর ইউনিয়নের ভদ্রাসন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান ও স্বতন্ত্র বিএনপি প্রার্থী মাহতাব উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিলে তিন ঘণ্টা ভোট স্থগিত ছিল। র‌্যাবের এসএসপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ সময় ইটপাটকেলে তাদের তিন সদস্য সামান্য আহত হয়।

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর রূপাপাত ইউনিয়নে নৌকা সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান সোনা মিয়ার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাকন্দি কেন্দ্রে ভোটের আগের রাতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে নৌকার প্রার্থী ও এজেন্টের গোপন সাক্ষাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগে শনিবার রাতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত প্রমাণ না হওয়ায় নৌকার এজেন্ট সেলিম রেজা ও প্রিসাইডিং র্কমকর্তা রেজাউল করিমকে সতর্ক করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড নাজমুন নাহার। ওই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোক্তেল হোসেনের অভিযোগ, বারাকান্দিসহ কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে ভোটের আগের রাতে প্রভাব বিস্তার এবং অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন নৌকার প্রার্থী।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের বালুচর ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। এতে পুলিশ দখলকারীদের হটাতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মীরা ওই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাসকান্দি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রটি দখলের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। কিন্তু দখলচেষ্টাকারীরা পাশেই একটি জায়গায় জড়ো হয়ে কেন্দ্রটি আবারও দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ তাদের হটাতে গেলে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ তাদের হটাতে ৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। তবে পুলিশের তৎপরতায় ১৫ মিনিটের মধ্যেই কেন্দ্রটিতে আবারও ভোট গ্রহণ শুরু হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিরাজদীখান-টঙ্গীবাড়ি সার্কেল) রাশেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের নাচনাপাড়া সাইক্লোন শেল্টারে ভোট দিতে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিন সমর্থক আহত হয়েছে। আহতরা জানায়, নৌকা সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা করেছে।

পাবনা সদরের হেমায়েতপুর ইউনিয়নে নৌকার সমর্থকরা ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় সদরের দু’জন গুলিবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি করে। এ ছাড়া আটঘরিয়া উপজেলার মাঝপাড়া ইউনিয়নের পারখিদিরপুর ভোটকেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের হামলায় তিনজন আহত হয়। চরতারাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গোলাইলবাড়ী ও ভাদুরডাঙ্গি কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের সহায়তায় ভোট কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই প্রিসাইডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়াও নৌকা প্রতীকের দুই এজেন্টসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, দায়িত্বে অবহেলার কারণে মধ্যগড্ডিমারী পণ্ডিতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শফিকুল ইসলাম ও মধ্যগড্ডিমারী লুৎফর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দেলোয়ার হোসেনকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জে কেন্দ্র দখল; ভোট স্থগিত:

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো গাজীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিশনন্দী মাদ্রাসা। নারায়ণগঞ্জের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিয়ুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তিনটি কেন্দ্রেই সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হলে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এই কেন্দ্রগুলোতে পরবর্তী সময়ে ভোট গ্রহণ হবে।

বিশনন্দী ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৩৩টি ককটেল বিস্ম্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। দয়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থী মো. শাহিন তার লোকজন নিয়ে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করেন। এ সময় তার প্রতিপক্ষ সদস্য প্রার্থী হাবিবুর রহমানের সমর্থকদের সঙ্গে শাহিনের সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে অন্তত আটটি ককটেল বিস্ম্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছে। এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয়।

গাজীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনটি ককটেল বিস্ম্ফোরণ হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শাহিন আলম জানান, এক সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে প্রতিপক্ষ আরেক প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এখানে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করে তারা। পরে পুলিশ দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিশনন্দী দারুল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও বিশনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থী আলী আকবর ও আব্দুর রহিমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কেন্দ্র দুটিতে ২২টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

আড়াইহাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আশরাফুল আমিন জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ৩০ জন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে এসেছে। তাদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়ার কাহালু সদর ইউনিয়নের বুড়ইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর এজেন্টকে বের করে দেন নৌকার প্রার্থী এনামুল হক মিঠু। এ ছাড়া কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সাংবাদিকদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। অন্য একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণ শুরুর পরপরই আন্ধারমানিক জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থী আ. মালেক ও আবুল কাশেমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সংঘর্ষে আল মামুদ ফকির, রাজু ফকির ও লাল মিয়া ব্যাপারীর হাত-পা ভেঙে দেয় প্রতিপক্ষ। আহতদের সিরাজগঞ্জ ও পাবনার বেড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জালালপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চৌবাডিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কয়েকশ ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়ে যায়। এতে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গায় ভোট বর্জন: চুয়াডাঙ্গায় ভোট কারচুপির অভিযোগে আলুকদিয়া ও কুতুবপুর ইউনিয়নে চার স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কুতুবপুর ইউনিয়নের ভুলটিয়া কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে আলুকদিয়া ইউনিয়নের জোড়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে ভোট দিতে যাওয়ার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই কর্মীকে ছুরিকাঘাত করেছে নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা।

চট্টগ্রামের পটিয়ায় হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ব্যালট ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এ কারণে তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। ছনহরা ইউনিয়নের মঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী কোহিনুর আক্তারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী বিবি মরিয়মের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা ইউনিয়নের সব কেন্দ্র দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম। পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং স্থানীয় এমপির ছোট ভাই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন অভিযোগ করে তিনি ‘ প্রহসনের নির্বাচন’ বর্জন করেন।

জাল ভোট, কারাদণ্ড: জাল ভোটের অভিযোগে মাদারীপুরের শিবচরের একটি কেন্দ্র থেকে একজনকে আটক করে ছয় মাসের জেল দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আরেকটি কেন্দ্র থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে।

ভোট চলাকালে ভদ্রাসন ইউনিয়নের ৫নং কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করলে শাহীন (১৮) নামের এক যুবককে প্রিসাইডিং অফিসার আটক করেন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে ছয় মাসের জেল দেন। অন্যদিকে সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর মোল্লাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হৃদয় নামের এক যুবক জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে আটক করে।

ফরিদপুর, বগুড়া, পিরোজপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর:

ফরিদপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহের কয়েকটি স্থানে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব জায়গায় গতকাল ভোট ছিল না। ফরিদপুরের সালথায় ইউপি নির্বাচন ও জমিজমা নিয়ে দু’জনের কথা কাটাকাটির জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় মোহাম্মদ মাতুব্বর (৬০) নামে গুরুতর আহত এক ব্যক্তি শনিবার ভোর রাতে হাসপাতালে মারা গেছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের নারানদিয়া গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মাতুব্বরের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর রাতেই কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর করে নুরুর সমর্থকরা।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মোহাম্মদ মাতুব্বরের ভাতিজা নুরু মাতুব্বর গত ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনে মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এছাড়া দু’পক্ষের মধ্যে জমি নিয়েও বিরোধ চলছিল।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুই মেম্বার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ও আব্দুল মান্নানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। শনিবার রাতে কাফুরা পূর্বপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আগামী ৫ জানুয়ারি এ ইউনিয়নে ভোট হবে।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বড় মাছুয়া ইউনিয়নে শনিবার সন্ধ্যায় সহিংসতায় চার পুলিশ ও চশমা মার্কার সমর্থক ১৫ নারীসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। ইউনিয়নের দক্ষিণ বড় মাছুয়া গ্রামের বটতলা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।

বড় মাছুয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান নাসির হোসেন হাওলাদার অভিযোগ করেন, তার একদল নারী কর্মী প্রচারণা চালাতে দক্ষিণ বড় মাছুয়া গ্রামের বটতলা নামক স্থানে গেলে নৌকার প্রার্থী আয়শা আক্তার মনির সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। নৌকার প্রার্থী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আগামী ৫ জানুয়ারি এ ইউপিতে ভোট হবে।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গাঙ্গাইল ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার অফিস ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থী সৈয়দ আশরাফুজ্জামান খোকন প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন ও সমর্থকদের দায়ী করে সংশ্নিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আসাদুজ্জামান দাবি করেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ সাজানো।

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তি এলাকায় এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় নামীয় ১১৫ জন ও অজ্ঞাতনামা আরও ৬০ জনসহ ১৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার বকশীগঞ্জ থানায় মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদুল আলম বাবুর বড় ভাই আমজাদ আলী।

সূত্র: সমকাল

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com