লঞ্চ স্টাফদের দুষছেন দগ্ধরা
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ৪৭ জনের চিকিৎসা চলছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাদের চিকিৎসায় ঢাকা থেকে সাত সদস্যের টিম এবং বরিশালের অর্ধশতাধিক চিকিৎসক কাজ করছেন।
হাসপাতাল থেকে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি ওষুধ ও খাবার সরবরাহে সন্তুষ্ট দগ্ধরা। তবে স্বজনহারা দগ্ধ রোগীদের চোখের পানি যেন থামছে না। তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই কারও কাছে। এই দুর্ঘটনায় লঞ্চ স্টাফদের দুষছেন দগ্ধরা।
শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে কথা হয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, বরিশাল নদীবন্দর পার হওয়ার আগেই লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেক গরম হয়ে যায়। এর ওপর বসা যাচ্ছিল না। বিষয়টি লঞ্চ স্টাফদের একাধিকবার জানানোর পর তারা কম্বল পেতে দেয়। এতেও কাজ হচ্ছিল না। বিষয়টি গুরুত্বেই দেয়নি তারা। লঞ্চটি বরিশাল নৌবন্দরে নোঙর করলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে এভাবে কোনও লঞ্চ চলাচল করতে না পারে। লঞ্চ স্টাফদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান চিকিৎসাধীন দগ্ধরা।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৬৭ জনকে ঝালকাঠি থেকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে যাদের আশঙ্কাজনক ১৯ রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এক শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৪৭ রোগীর অবস্থা ভালো।
তিনি আরও জানান, তাদের চিকিৎসায় ঢাকা থেকে ৭ সদস্যের একটি টিম আজ সকাল থেকে কাজ শুরু করেছেন। চিকিৎসায় যাতে কোনও ধরনের ত্রুটি না হয়, সেজন্য স্থানীয়ভাবে অর্ধশতাধিক চিকিৎসক নিয়ে আরও একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা শুক্রবার থেকেই দগ্ধদের সেবা দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে তারা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতলের সকল চিকিৎসক-নার্স ও স্টাফদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নলছিটির সুগন্ধা নদীর পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন। ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১৬ জনকে। আহত হয়েছেন শতাধিক।
মৃত ৪১ জনের মধ্যে চার জনের লাশ নিয়ে গেছেন স্বজনরা। পরে আরও পাঁচ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৩২ লাশ বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে দুই জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। বাকি ৩০ জনের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বরগুনার সার্কিট হাউজ মাঠে তাদের জানাজা হয়েছে। পোটকাখালী গণকবরে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলমকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরের দিন শনিবার সকাল থেকে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনরা নদী ও নদী তীরবর্তী এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন।