একটি তত্বাবধায়ক সরকারই পারে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার-ভিত্তিক সমাজ গড়ার!
তত্ত্বাবধায়ক সরকার হচ্ছে, একটি সরকারের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় থেকে নতুন একটি সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ববর্তী সময়ে রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনায় নিয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সাধারণত যেকোন প্রতিষ্ঠিত সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত বিদায়ী সরকারের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রথা লক্ষণীয়। এ স্বল্পস্থায়ী সরকার দৈনন্দিন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে এবং নীতি নির্ধারণী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকে, যাতে এ সরকারের কার্যাবলী নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব সৃষ্টি না করে। এ অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার জন্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকে।
বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত যে গণতন্ত্রের প্রাণ হলো নির্বাচনী ব্যবস্থা। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক ও মানসিক সেতুবন্ধ হয়ে থাকে। দেশের শাসক তথা সরকার হিসেবে কে বা কারা তথা কোন রাজনৈতিক দল আসবে সেটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিরও হয়। তাঁরই সাথে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ও মজবুত লাভ করে।
একটি দেশে গণতন্ত্র কায়েম করতে হলে কিছু প্রতিষ্ঠানকে কার্যকরী করতে হয়। যেমন: নির্বাচন কমিশন, সংসদ, বিচার বিভাগ ইত্যাদি। আর যদি এসব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব থাকে এবং সেগুলো ভঙ্গুর অবস্থার দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে বুঝতে হবে সে দেশে গণতন্ত্র নেই।
তাই আজ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমি এটাই স্পষ্ট করতে চাচ্ছি যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার মধ্যরাতে নির্বাচিত হতে যেয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার নামের এই অশুভ শক্তি শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই ধ্বংস করেনি, ধ্বংস করেছে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াকে।
ইতিহাসবিদদের রচিত ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, পূর্বেও এদেশে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছিল আজকের এই আওয়ামী লীগ। তখন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। এরপর আবার স্বৈরশাসকের কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যে খালেদা জিয়া আজও পূনরায় বন্দী হওয়া ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ করতে যেয়ে বিনাচিকিৎসায় গণতন্ত্রের সাথে একই কারাগারে বন্দী। কারণ আজকেও সেই পুরোনো ক্ষমতাসীনদের হাতেই ভূলুণ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র এবং বন্দী হয়েছে গণতন্ত্র।
তাই আজকে আবারও সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। যে নির্বাচন তত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষেই সম্ভব। যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ফিরে পাবে ভাতের অধিকার ভোটাধিকার সহ সকল মৌলিক অধিকার। যে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার।
তাই আসুন দেশের আপামর জনগণের প্রত্যাশা বিবেচনায় নিয়ে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে স্লোগান দাতা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান ও বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, সেই চলমান আন্দোলনে সামিল হই, ঠিক সেই শহীদ নুর হোসেন নামের সৈনিকের মতো, যে নুর হোসেন ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের এক লড়াকু সৈনিক হিসেবে রাজপথে নেমে এসেছিলেন বুকে পিঠে ’গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ শ্লোগান লিখে। যে শ্লোগানে অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে নব্য আওয়ামী স্বৈরাচারের ক্ষমতার মসনদ।
পরিশেষে শুধু বলতে চাই দেশের প্রকৃত মালিক আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের হাতে নির্যাতিত নিপীড়িত ‘জনগণ’ সেই মালিকদের নির্বাচনে নির্ভয়ে অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনভাবে ভোট প্রয়োগের সুযোগ যদি আমরা না এনে দিতে পারি তাহলে আজকের বন্দী গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটবে, সেইসাথে বিলীন হয়ে যাবে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকার বাংলাদেশ।
-ডালিয়া লাকুরিয়া