হার্ভার্ডের নাম ক্ষুন্ন করে প্রতারণা

0

হার্ভার্ডে কাজের প্রতিশ্রুতিতে ভারতীয় প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নারী সাংবাদিকের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন এনডিটিভির সাবেক উপস্থাপিকা নিধি রাজদান। তাকে হার্ভার্ডে উন্নতমানের চাকরির প্রলোভন দিয়ে টার্গেট করা হয়েছিল অনলাইনে। তবে প্রতারকের পরিচয় রয়েছে রহস্যে ঘেরা। তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এর ফলে হার্ভার্ড কেন তাদের নামকে ব্রান্ড হিসেবে ব্যবহার করে সুনাম ক্ষুন্ন হওয়া সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেয়নি তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে প্রলোভনের শিকার একজন ভিকটিম হার্ভার্ডকে অবহিত করেছিলেন। টার্গেটে পড়েছিলেন এমন আরেকজন হলেন বিজেপির মুখপাত্র নিঘাত আব্বাস।

যখন প্রতারক তার পাসপোর্ট সম্পর্কে এবং ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কে চাপাচাপি করতে থাকে তখন তিনি হার্ভার্ডের একজন প্রশাসককে সরাসরি এবং ইমেইলের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক হার্ভার্ডের ভাইস প্রোভোস্ট অফিসের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর বেইলি পাইনে এর জবাবে বলেছেন, হার্ভার্ডের ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করে যে অফিসিয়াল আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল সংশ্লিষ্টদের কাছে, তা ছিল ভুয়া। মিস আব্বাসের কাছে বেইলি পাইনে সেজে ওই প্রতারক জানতে চান, তিনি কি অধিক পরিমাণ তথ্য শেয়ার করতে ইচ্ছুক কিনা। এ সময় বেইলি পাইনে অনেক তথ্য পাঠান। তার মধ্যে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি ফোন নম্বর। ইমেইল ঠিকানা। হার্ভার্ডের ডকুমেন্টের ভুয়া কপির স্ক্রিনশট এবং হোটেল বুকিং রেকর্ড। এসব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এতসবের পরও হার্ভার্ড কি ব্যবস্থা নিয়েছিল, তা পরিষ্কার নয়। এ বিষয়ে মিস পাইনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মিস আব্বাস যেসব তথ্য দিয়েছেন সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কি ব্যবস্থা নিয়েছে এমন প্রশ্নে কোনো উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হার্ভার্ডের মুখপাত্র জেসন নিউটন।

এই প্রতারণার প্রথম টার্গেটে পড়েন মুখরা সাংবাদিক রোহিনী সিং। ২০১৯ সালের মধ্য আগস্টে তাওসিফ আহমেদ নামে একজনের কাছ থেকে তিনি একটি টুইট বার্তা পান। তাওসিফ আহমেদ তাকে একটি উচ্চ পর্যায়ের মিডিয়া কনফারেন্সে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানান। বলা হয়, এক্ষেত্রে সব খরচ বহন করবে হার্ভার্ড। তাওসিফ তাকে অ্যালেক্স হিরশম্যানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর সন্দিহান হয়ে ওঠেন রোহিনী সিং। অ্যালেক্স হিরশম্যান তাকে একটি ইমেইল পাঠান হার্ভার্ডের অফিসিয়াল ঠিকানা এড়িয়ে অন্য ঠিকানা থেকে। ফলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন রোহিনী।
এর পরের টার্গেট হলেন সাংবাদিক জয়নব সিকান্দার। তিনিও তাওসিফ আহমেদের কাছ থেকে ২০১৯ সালের ২২ শে আগস্ট একটি টুইটার ম্যাসেজ পান। একই রকম প্রস্তাব দেয়া হয় তাকেও। একই বার্তা পাঠানো হয় তাকেও। যখন জয়নব ডিনের কাছ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণপত্র দাবি করেন, তারপর তার আর কোনো জবাব আসেনি। এর পর জয়নবও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

এরপরের টার্গেটে পড়েন ভারতের প্রথম সারির একটি প্রকাশনার এক নারী সাংবাদিক। তিনি নাম প্রকাশ করতে চান না। বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে যখন সন্দেহজনক ফোন নম্বর দেয়া হয়, সঙ্গে সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে হ্যাকাররা নিধি রাজদানের নাগাল পেয়ে যায়। ১৪ই নভেম্বর তিনি মেলিসা রিভ নামের একজনের কাছ থেকে প্রথম ইমেইল পান। তাতে তাকে হার্ভার্ডে একটি মিডিয়া বিষয়ক সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এরপর ইমেইলের মাধ্যমে তাকে তাওসিফ আহমেদের সঙ্গে পরিচিয় করিয়ে দেয়া হয়। তাওসিফ জানায়, তিনি হার্ভার্ডে সাংবাদিকতায় একটি কাজ নিতে পারেন। পদ খালি আছে। তার এ কথায় সন্দিহান হয়ে ওঠেন রাজদান। তাকে এরপরে ভরত আনন্দ নামে একজন সাক্ষাতকার নেন। তিনি নিজেকে হার্ভার্ডের বাস্তব ভাইস প্রোভোস্ট হিসেবে পরিচয় দেয়। তবে রাজদান তাকে কখনো দেখেননি। তার সাক্ষাতকার নেয়া হয় ফোনে।

এসব প্রতারক হার্ভার্ডকে কলুষিত করার বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা এরই মধ্যে গোড্যাডি থেকে হার্ভার্ড ক্যারিয়ার ডট কম নামে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একটি ওয়েবসাইট কিনেছে। তাতে স্থাপন করেছে মাইক্রোসফট ইমেইল সার্ভার। এটা ব্যবহার করে তারা হার্ভার্ডের নামে ইমেইল পাঠাতে পারে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com