শিশুতোষ এই গল্পের মত, আজ আমরাও এভাবেই নিজেদেরকে ধীরে ধীরে নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে অন্যের খাবারে পরিনত হচ্ছি!
এক জঙ্গলে বাস করত লাল, সাদা ও কালো রংয়ের তিনটি গরু। তারা ছিল একে অপরের পরম বন্ধু। অপরদিকে ঐ জঙ্গলে ছিল একটি হিংস্র বাঘ। তার লক্ষ্য ছিল একটাই। যেভাবেই হোক এসব নাদুস নুদুস গরুগুলোকে খেতে হবে। গরুগুলো একত্রে সংঘবদ্ধভাবে চলাফেরা করতো। তারা ছিল ঐক্যবদ্ধ। তাদের শিংগুলোও ছিল ভয়ংকর। চোখা আর ধারালো।
বাঘটি কৌশল করলো। প্রথমে সে সাদা ও লাল গরুকে বলল, বাহ্ কত সুন্দর তোমাদের গায়ের রং! কিন্তু কালো গরুটার গায়ের রং অনেক বিশ্রী। তোমরা কীভাবে তার সাথে বন্ধুত্ব করলে?
বাঘের এমন আন্তরিকতাপূর্ণ কথায় লাল ও সাদা গরুর মধ্যে সংশয় দেখা দিলো। ধীরে ধীরে তারা কালো গরুকে ঘৃণা করতে লাগলো। কালো গরুকে তারা নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলো। অন্যদিকে বাঘটি এখন তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হলো। এ সুযোগে বাঘটি পরিকল্পনা মাফিক কালো গরুকে হত্যা করে নিজের উদরপূর্তি করলো।
এরপর এবার সে একই কৌশলে লাল গরুকে বলল, তোমার গায়ের রং কত সুন্দর! দেখ, আমার গায়ের রংও তোমার মত লাল। তাই তুমি হবে বনের রাজা। তোমার সাথে সাদামাটা রংয়ের ওরকম একটা সাদা গরুর সাথে বন্ধুত্ব কি করে হয়? লাল গরুটা ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার নিজেকে ভালো করে দেখে নিলো। তারপর মনে মনে চিন্তা করল, ঠিকই তো বলেছে বাঘটা। আর পরদিন বাঘটা যখন সাদা গরুটাকে হত্যা করে খেয়ে নিলো, তখন ‘বাঘের খেতাব প্রাপ্ত বনের রাজা’ লাল গরুটা এটা দেখেও কিছুই বললো না।
এরপর বাঘের আবারও যখন খাবারের প্রয়োজন দেখা দিলো, তখন সে লাল গরুটার ঘাড় মটকে ধরলো। হতভম্ব হয়ে গরুটা বললো, তুমি না ঘোষণা দিয়েছিলে- আমিই বনের রাজা। এবার বাঘ হুংকার দিয়ে বললো, তুই আবার কোথাকার বনের রাজা? রাজ্য চালানোর মতো তোর কোনো বুদ্ধি আছে? বুদ্ধি থাকলে কি তুই আমার কথা বিশ্বাস করতিস। আর তোরা একত্রে থাকলে তো আমিও তোদেরকে মারতে পারতাম না।
শিশুতোষ এই গল্পের মত, আজ আমরাও এভাবেই নিজেদেরকে ধীরে ধীরে নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে অন্যের খাবারে পরিনত হচ্ছি!