জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অপমানজনক আচরণ ও দায়িত্ব পালনে অসহযোগিতা করায় দোঁলনচাপা ছাত্রী হলের প্রভোস্টসহ ৪ জন হাউজ টিউটর পদত্যাগ করেছেন। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবীরের কাছে এ পদত্যাগ পত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্র জমাদানকারী শিক্ষকরা হলেন দোলনচাপা মহিলা হল প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা ও চারজন হাউজ টিউটর হলেন আরিফ আহমেদ, আফরুজা ইসলাম লিপি, রাশেদুর রহমান ও ফারজানা খানম।
পদত্যাগকারী শিক্ষকরা জানান, হল প্রভোস্টের দায়িত্ব পালনে শিক্ষার্থীদের অসদাচরন, দায়িত্ব পালনে বাধা ও হলের সার্বিক কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের অসহযোগীতা, কতিপয় শিক্ষার্থীদের দ্বারা লাঞ্চনার শিকার হওয়া ও কর্মের পরিবেশ না পাওয়ায় তারা পদত্যাগ করেন। তবে পদত্যাগ পত্রে তারা আর কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেননি।
জানা যায়, হলে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ খাবারের আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হলের আয়োজন একসাথে করা নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল হাসান রাকিবের সাথে মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দোলনচাপা মহিলা হল প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরার বাদানুবাদ হলে বুধবার বিকালে পদত্যাগ করেন দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা। রাকিব তাদের নানাভাবে হুমকি দেন।
এ বিষয়ে প্রভোস্ট সিরাজুম মনিরা জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে হলের কিছু শিক্ষার্থী আমার সাথে নানাভাবে খারাপ আচরণ করতো। এর আগে একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। ইদানিং কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার দায়িত্ব পালনে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি ও খারাপ আচরণ করে যা একজন শিক্ষক হিসেবে আমার জন্য অপমানজনক। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোনো সহযোগিতা পাইনি তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্তমানে আমি বাসায় অবস্থান করছি।
প্রভোস্ট সিরাজুম মনিরা আরও বলে, আমার পদত্যাগের সাথে সাথে একই কারণে আমার চারজন হাউজ টিউটরও পদত্যাগ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল হাসান রাকিব জানান, শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমরা দুটি হলের খাবারের আয়োজন একসাথে করতে চেয়েছিলাম। আর এই আলাপটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রোক্টর স্যারের সামনেই হয়েছে। দোলনচাপা মহিলা হল প্রভোস্ট ছাত্রী প্রতিনিধিদের না জানিয়ে একতরফাভাবে খাবারের আয়োজন করেছে। এতে হলের ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। যেহেতু বিজয় দিবস আমি চেয়েছি এসবকে কেন্দ্র করে যেনো কোন ঝামেলা তৈরি না হয়। তাই বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আহমেদুল বারী বলেন, কয়েকজন শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। আমরা বিজয় দিবসের আগে সন্তানতূল্য শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনি শক্তি প্রয়োগ করতে চাই না। কিন্তু কিছু ছাত্রলীগ নেতা যে ঔদ্ধত্য দেখালো, সব খাবারের তারা খাবে, তাদেরকে ফিস্টের টাকা দিয়ে দিতে হবে, সাধারণরা পাবে না এটা কেমন কথা? এটা তো বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সাথে যায় না। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। এরা আমাদের শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমি মিডিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, ফিস্টের টাকা কেন ছাত্রলীগকে দিতে হবে? আপনারা হয়তো জানেন যে ছাত্রলীগেরও এমন অনেক কর্মী আছেন যারা এসব অপকর্মকারীদের জন্য টিকতে পারছে না। বিজয় দিবসের রাতে আমি কতটা অসহায় যে আমি পুলিশকে বলতে পারছিনা যে প্লিজ টেক অ্যাকশন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হুমায়ুন কবীর গতকাল (১৫ ডিসেম্বর) বলেন, বুধবার বিকেলে পদত্যাগপত্র পেয়েছি। আগামীকাল আমাদের মহান বিজয় দিবস। এ দিবস পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসির সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।