গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান মির্জা ফখরুলের
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে দুর্বার গণআন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল সোমবার দেশের সব রাজনৈতিক দলসহ গণতন্ত্রমনা মানুষের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণের দাবিতে সমাবেশ হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত এক বছর ধরে দেশনেত্রীর চিকিৎসার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছি। আর বিলম্ব নয়; জনগণ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে, পেশাজীবী ভাইয়েরাও বেরিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, আজকের আন্দোলন শুধু খালেদা জিয়াকে মুক্তির আন্দোলন নয়; এ আন্দোলন জাতিকে মুক্তির আন্দোলন। আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে, আমাদের অর্জিত সব স্বপ্ন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আসুন সব গণতান্ত্রিক জনগণ, রাজনৈতিক দলসহ সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের মধ্য দিয়ে একটি দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি।
নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন, আর বিলম্ব নয়; জনগণ বেরিয়ে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ আরও বেশি বেশি আসবে। পেশাজীবী ভাইয়েরাও আরও শক্তির সঙ্গে বেশি করে এগিয়ে আসবেন। তখন নিঃসন্দেহে আমরা সেই আন্দোলন শুরু করতে পারব। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে আমরা বাধ্য করতে পারব, বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে।
শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণভাবে একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। বেগম খালেদা জিয়াকে তাদের যে ভয়, তিনি যদি সুস্থ হয়ে বের হয়ে আসেন, তা হলে তাদের তখতে তাউশ ভেঙে খানখান হয়ে যাবে। সেই কারণে তারা তাকে বাইরে চিকিৎসার জন্য দেন না।
খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এত অসুস্থ যে এখন ডাক্তারা নিজেরাই বলছেন, খালেদা জিয়া জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা বলেছেন, এখন যে চিকিৎসা করলে আল্লাহতায়ালা আবার তাকে ফিরিয়ে দিতে পারেন। তার চিকিৎসা এ দেশে নেই, তাকে বিদেশে পাঠানো দরকার। কিন্তু এই সরকার তাকে বাইরে যেতে দিতে চায় না।
বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ দেশ ও জাতির একজন অবিসংবাদিত নেতা। তিনি ১৯৭১ সাল থেকেই এ দেশের মানুষের প্রতি তার যে দায়িত্ব তা পালন করে চলেছেন। ১৯৭১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, সেই সময় তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু সেদিন তিনি সেনাদের পরামর্শ দিতে সক্ষম হয়েছেন কখনও কোনো কারণে শহীদ জিয়ার অনুমতি ছাড়া পাকিস্তান বাহিনীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করবে না। তিনি তার দুই শিশু পুত্র আজকের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোকে সঙ্গে নিয়ে গোপনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে আত্মীস্বজনের বাসায় আত্মগোপন করেছিলেন। সেখান থেকে তাকে (২ জুলাই) পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায় কারাগারে। সেখান থেকে তিনি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে মুক্ত হন।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানকে এ দেশের শত্রুরা হত্যা করেছে, তখন আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেছিল বিএনপি শেষ হয়ে গেল। কিন্তু সেদিন জিয়াউর রহমানের সেই পতাকা হাতে খালেদা জিয়া পথেপ্রান্তরে গণতন্ত্রের গান গেয়ে মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। দীর্ঘ ৯ বছর বছর সংগ্রাম করে এরশাদকে পরাজিত করে জনগণের পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করেছিলেন। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সংদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আবারও বাংলাদেশের শত্রুরা যখন দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইল, তখন তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিয়ে সংবিধানে সংযোজন করেছেন।
সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন মঈনউদ্দিন ফখরুদ্দিন সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করল এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করল, তখনও নীরবে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন তিনি। সেখান থেকেও তিনি বিবৃতি দিয়েছিলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দিয়ে আটকে রাখা এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সামগ্রিক চক্রান্তের একটি বহির্প্রকাশ। ওয়ান ইলেভেনে যে বিরাজনীতিকরণের চক্রান্ত শুরু হয়েছিল, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার যে চক্রান্ত সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে।