‘ভোট দিলে কি, আর না দিলে কি। কেন্দ্রে কি নিজের পছন্দ মতো ভোট দিতে পারমু?
‘ভোট দিলে কি, আর না দিলে কি। কেন্দ্রে কি নিজের পছন্দ মতো ভোট দিতে পারমু? আগের ভোটের সময় গিয়ে দেখি আমার ভোট দেয়া হয়ে গেছে’। এভাবে আসন্ন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে নিজের কথা শেয়ার করলেন ঢাকা উত্তর সিটি পরপোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ডের এক ভোটার। শুক্রবার সকালে পশ্চিম শেওড়া পাড়ার আনন্দ বাজার এলাকায় কথা হয় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, গার্মেন্ট শ্রমিক মিরাজ মিয়া ও শাহ আলমের সঙ্গে। সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে কি ভাবছেন, জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ভোট নিয়ে ভাবছি না। বর্তমান সময়ে আমাদের ভোট দেয়া লাগে না, আমার ভোট কেউ না কেউ দিয়ে দিবে। তাই ভোট দিতে যাবো কিনা বলতে পারছি না। মিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমি শ্রমিক।
দিন আনি, দিন খাই। ভোট দিলে কি হইবো, ভোটের সময় অনেকেই ভোট চাইতে আইবো, ওরা জিতবে। নেতাগো কপাল খুলবে। আমাগো ভাগ্য একটাই, কাম করমু, ভাত খামু।’ শাহ আলম জানান, শুনছি মেশিনের মাধ্যমে ভোট হবে। আমরা তো আগে ব্যালটে সিল মারতাম। মহিলারা কি মেশিন দিয়ে ভোট দিতে পারবে? মিরপুর-২ এ ফার্নিচার ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, ভোটের আমেজ এখনো দেখতে পারছি না। টিভি ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম ৩০ জানুয়ারি ভোট। তবে এলাকায় কোন প্রচার প্রচারণা কিংবা কাউকে ভোট চাইতে দেখি নাই। ব্যবসায়ী হৃদয় বলেন, ৬/৭ বছর আগে ভোটার হয়েছি। এর আগে ভোট দিতে যাওয়া হয়নি। এবার পছন্দ মতো যোগ্য মেয়র ও কাউন্সিলদের ভোট দিবো। যারা এলাকায় কাজ করবে। বৃহস্পতিবার রাতে কথা হয় কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রাজিব আহমেদের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘ভোট দিয়া কী অইব? ভোটের লড়াই তো আর নাই। হ্যারাইতো জিতব।’ শ্যামলীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত, ফারজানা আক্তার সেতু জানান, ভোট আমার নাগরিক অধিকার। যে দলই নির্বাচন করুন, ভোটের দিন অবশ্যই ভোট দিতে যাব।
রিকশা চালক শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি ঢাকার ভোটার না। তবে ঢাকায় ২০ বছরের বেশি সময় রিকশা চালাই। আগে দেখলাম ভোট আসলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঈদের মতো মানুষ আনন্দ করতো। পাড়া মহল্লায় ছেলেরা মিছিল মিটিংয়ে মেতে উঠতো। চায়ের দোকানে চা খাওয়ার জন্য সিরিয়াল পড়তো। ভোটের সময় অনেক টাকা আয় হতো। ভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে গেলে বেশি টাকাও পেতাম। এখন আর সেই সব দেখি না। এখন ভোটের দিন মানুষই রাস্তায় থাকে না। রিকশাও সে দিন বেশি একটা চলে না। শ্যাওড়া পাড়ার এক মসজিদের খতিব বলেন, আমরা ভোট দিলেও ক্ষমতাসীন দলের লোক পাশ, না দিলেও পাশ। সিটি করপোরেশনের ভোট দিতে যাব কিনা এখনো ঠিক করি নাই। তবে আমার এলাকার কাউন্সিলর জনি অনেক ভালো মানুষ। সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মতো স্বপ্ন তার। এবার স্বতন্ত্র্ত্র ভোট করবে তার জন্য ভোট দিতে যেতে পারি। সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী মিলন জানায়, এবছর ভোটার হয়েছি। ভোট দিতে পারবো কিনা এখনো জানি না। তেজগাঁও এলাকায় কথা হয় এক কলেজ শিক্ষকের সাথে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে সাধারণ ভোটারদের ভোট দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ভোটের আগেই ফলাফল পাওয়া যায়। যখন যে দল ক্ষমতায় তারাইতো জিতবে। ভোট কেন্দ্র আমাদের কিছুই করার থাকে না। প্রিজাইডিং অফিসাশের দায়িত্বে শুধু মাত্র রোবটের মত বসে থাকতে হয়। প্রতিবাদ করে কি মার খাব।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন অফিস সংলগ্ন মিরপুর, শ্যামলী, মনিপুরি পাড়া ঘুরে নানা পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ৩০শে জানুয়ারি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের তেমন কোন আগ্রহ নেই। এলাকায় ভোটের হাওয়া এখনো লাগেনি। নেই প্রচার প্রচারণা। চায়ের দোকানে নেই ভীড়। একই চিত্র দেখা যায়, রাজধানীর ফার্মগেট, কাওরান বাজার, তেজগাঁও এলাকায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা মিলছে ভিন্ন চিত্র। এবার ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহন করলেও গত বৃহস্পতিবার যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৩ জন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। উত্তর সিটিতে বাদ পড়েছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী। চূড়ান্ত প্রার্থীরা এখন আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণায় নামার অপেক্ষায়। চলছে ঘরোয়া প্রস্তুতি। অনেকেই মনে করছেন চূড়ান্ত লড়াই হবে আওয়াম লীগ ও বিএনপির চার প্রার্থীর মধ্যে। তবে মেয়রদের ভোট নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা কাজ করছে ভোটারদের মধ্যে। ইভিএমে নির্বাচন তাই আগ্রহও কম সাধারণ ভোটারদের। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই তাঁদের মাথাব্যথা। বেশির ভাগ এলাকায় ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে আছেন সাধারণ ভোটাররা।
অনেকেই বলছেন, ১০ই জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পরই এলাকা প্রচার প্রচারণার দেখা মিলবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনেই প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইবেন।