অস্থির পুঁজিবাজারে আবার বড় পতন: ছয় কোম্পানির বিক্রেতা উধাও

0

বড় উত্থানের পর বড় পতন। এভাবেই চলছে দেশের পুঁজিবাজার। এমন অস্থির বাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল রোববার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। তবে পতনের বাজারেও শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ বেড়ে ছয় কোম্পানির বিক্রেতা উধাও হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজারের একটি ‘অস্বাভাবিক ভবিষ্যৎ’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। গতকাল ক্যাপিটাল মার্কেট-সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের সংগঠন সিএমজেএফ’র এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের সময় আধা ঘণ্টা না গড়াতেই পতনের মধ্যে পড়ে বাজার। আর লেনদেনের শেষ দিকে পতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। গতকাল সার্বিক বাজারে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে পতনের তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম বেড়েছে ৯৯টির। আর ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৯২০ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৬০৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সূচকের বড় পতন হলেও বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় এক হাজার ৪৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১০৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। ৪৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাইফ পাওয়ার। এ ছাড়াও ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ সোনালী পেপার, ফরচুন সুজ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জিএসপি ফাইন্যান্স।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৯৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি তিন লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৯টির ও ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ছয় কোম্পানি : গতকাল একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হতে থাকলেও লেনদেনের পুরো সময়জুড়ে ভিন্ন চিত্র দেখা যায় এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, আরামিট লিমিটেড, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, মুন্নো অ্যাগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারি, রহিম টেক্সটাইল মিলস ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের। এই ছয় কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে দিনের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায়। এরপরও লেনদেনের শেষ দিকে এই ছয় কোম্পানির শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখিয়েও কিনতে পারেননি বিনিয়োগকারীরা। দিনের সর্বোচ্চ দামে শেয়ার ক্রয়ের আদেশ থাকলেও এই ছয় কোম্পানির শেয়ারের বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে যায়।

গতকাল দিন শেষে এমবি ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৪৮৬ টাকা ৯০ পয়সা, যা আগের দিন ছিল ৪৪৭ টাকা ৮০ পয়সা। আরামিট লিমিটেডের শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৩৫৩ টাকায়, যা আগের দিন ছিল ৩২৪ টাকা ৬০ পয়সা। ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের শেয়ারের দাম দুই হাজার ৬১৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৭৪৯ টাকা ১০ পয়সা হয়েছে। অন্য তিন কোম্পানির মধ্যে মুন্নো অ্যাগ্রো অ্যান্ড জেনারেলের শেয়ারের দাম ৫৭৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে ৬১৮ টাকা হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে রহিম টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২৮০ টাকা ৬০ পয়সা, যা আগের দিন ছিল ২৫৮ টাকা ১০ পয়সা। সোনালী পেপারের শেয়ারের দাম ৬৪২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে ৬৯১ টাকা ১০ পয়সা হয়েছে।

‘অস্বাভাবিক ভবিষ্যৎ’ : দেশের পুঁজিবাজারের একটি ‘অস্বাভাবিক ভবিষ্যৎ’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। গতকাল পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) সহযোগিতায় সংগঠনটির সদস্যদের জন্য বিএমজেএফ কার্যালয়ে দু’দিনের এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বিএসইসি কমিশনার বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের প্রশংসা করা যায় এমন ব্যাপক বিষয় আছে। পুঁজিবাজারের একটি অস্বাভাবিক ভবিষ্যৎ আছে বলে আমি মনে করি। আমি ‘অস্বাভাবিক’ কথাটি ইচ্ছা করেই বলেছি। এ সময় তিনি ‘অস্বাভাবিক ভবিষ্যতের’ বিষয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন, আমাদের এগিয়ে যেতে হলে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। অনেকসময় আপনারা পত্রপত্রিকায় লেখেন, যে হ্যাডলাইন দেন, সেখানে হয়তো দেখি শব্দ চয়নটা ভিন্ন হয়েছে। এটা একটা উদাহরণ। তিনি আরো বলেন, এই যে একটু আগে আমি অস্বাভাবিক বলেছি, বিষয়টি এ রকম। একটি বিষয় আপনি সুন্দর করে বলতে চাচ্ছেন, কিন্তু শব্দ চয়নের গুণগত ভিন্নতা থাকার কারণে শব্দার্থটা ভিন্ন হচ্ছে। এ জন্য আমি আপনাদের বলব, শুধু শব্দ চয়ন নয়, যে বিষয় নিয়ে বলছেন সেটির সম্পর্কে আরো শিখবেন, আরো জানার চেষ্টা করবেন।
এ দিন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথে একটি বৈঠকে অংশ নেন। ওই বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আইএমএফ সুন্দর একটি পুঁজিবাজার নিয়ে খুবই আশাবাদী। তাদের এ আগ্রহগুলোকে আমরা আরো প্রমোট করার অনুরোধ করব। এ জন্য আপনাদেরও অনুরোধ করব, সবাই হয়তো আগ্রহী হবেন না, তবে কেউ কেউ যারা আগ্রহী তারা যেন দেশের বাইরেও আমাদের পুঁজিবাজারকে উপস্থাপন করেন। পুঁজিবাজারের প্রসংশা করার মতো অনেক কিছু আছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com