১১ দফা দাবি আদায়ে সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিলেন শিক্ষার্থীরা
১১ দফা দাবি আদায়ে সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে নতুন বছরের শুরুতে দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সামিয়া।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর রামপুরায় হাতিরঝিলের পাশে ফুটপাতে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবক-শ্রমিকদের মানববন্ধন শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে আমি একাত্মতা প্রকাশ করেছি। শিক্ষার্থীদের এই ১১ দফা দাবি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, ১৬ কোটি মানুষের দাবি। প্রতিদিন যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ নিহত হচ্ছে। কেউ দাবি করতে পারবে না যে, আমি রাস্তায় বের হয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারব। শুধু ধনীরা ছাড়া।
তিনি আরও বলেন, এই দুর্ঘটনা কেন হয়, আমরা সবাই জানি, সরকারও জানে। ২০১৮ সালের শিক্ষার্থীদের ঐতিহাসিক আন্দোলনের সময় সরকার কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল। শুধু চালক ও হেলপারের কারণে এই দুর্ঘটনা হয় না, এখানে অনেকগুলো কারণ আছে। সেটার কারণ হচ্ছে সড়ক ব্যবস্থাপনা ভয়ংকর অনিয়ম ও দুর্নীতি।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বাসের চালক ও হেলপারদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নাই। তাদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নাই। নানা সমস্যায় জর্জরিত বাসে ফিটনেস নাই, চালকের লাইসেন্স নাই। এ কারণে যখন বাসগুলো সড়কের চলে, তখন মনে হয় মৃত্যুর দূত চলছে।
একপর্যায়ে তিনি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানান, ১১ দফা দাবি আদায় সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়া উচিত।
এর পরিপেক্ষিতে খিলগাঁও মডেল কলেজের ছাত্রী সোহাগী সামিয়া বলেন, আমরা এই ডিসেম্বরের পুরো মাসটা সরকারকে সময় দিতে চাই। এর মধ্যে আমাদের ১১ দফা দাবি যদি বাস্তবায়ন না করে, তাহলে আমরা নতুন বছরে আবার নতুন করে আন্দোলনে নামব। এছাড়া এরই মধ্যে ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য জনমত যাচাই করব ও অভিভাবকদের কাছে যাবো এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বাক্ষর গ্রহণ করব।
এ সময় ঢাকা জেলা ট্যাক্সি, ট্যাক্সি কার, অটো টেম্পু ও অটোরিকশার চালক-শ্রমিক ইউনিয়নের সহসাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে আমরাও একাত্মতা প্রকাশ করছি। কারণ এই আন্দোলনে আমাদের কথা তারা তুলে ধরেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আরও কিছু দাবি আছে, চালকদের লাইসেন্স পেতে হলে কোনো ঘুষ ও দালালদের শরণাপন্ন যেন না হতে হয়। একটি যানবাহনের ইনসুরেন্স থাকলেও চালকদের কোনো জীবন বীমা নেই। চালকদেরও জীবন বীমা চালু করতে হবে। এছাড়া অন্য দাবির মধ্যে চালকদের কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে এবং পরিবহন শ্রমিকদের সন্তানদের স্কুলের বেতন হাফ করতে হবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০১৮ সালের ঐতিহাসিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনেকগুলো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এসব বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়কে হত্যা ও নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না।
পরে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে মানববন্ধন শেষ করেন।