স্বাধীনতা-সার্বেভৌমত্বের প্রতীক খালেদা জিয়াকে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করছে সরকার: ফখরুল
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও বর্তমানে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘‘আপনারা জানেন আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক,স্বাধীনতা-সার্বেভৌমত্বে প্রতীক তিনিও আজকে তার মানবাধিকার, ন্যুনতম যে অধিকার, তার চিকিতসার অধিকার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
‘‘আজকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না, তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে দেশের নির্বাসিত অবস্থা রেখে দেয়া হয়েছে।”
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের বেদনার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আজকে এখানে আপনারা গুম হওয়া পরিবারের কথা শুনেছেন। গত ৮ বছর ধরে আমরা এই পরিবারগুলোর কান্না শুনেছি, আমরা শিশুদের কান্না শুনেছি। এখনো তাদের শিশুরা অপেক্ষা করে থাকে কখন তার বাবা ফিরে আসবে। এরকম একটা ভয়াবহ মর্মস্পর্শী পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। বাংলাদেশে আমরা যারা আছি আমাদের বার বার একথা বলার আর প্রয়োজন নেই যে, বাংলাদেশে কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।”
‘‘একটা কথা খুব পরিস্কার মানবাধিকার ও গণতন্ত্র এই দুইটা পরস্পরের পরিপূরক। গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার কোনোদিন রক্ষা হতে পারে না, আর মানবাধিকার ছাড়া কখনো গণতন্ত্র চলতে পারবে না। আজকে আমরা যদি দেখি কয়েকবছরের মধ্যে আমাদের এখানে যে মানবাধিকার ও হিউম্যান রাইটস বডিগুলো আছে তাদের যে হিসাব সেই হিসাবে দেখছি, প্রায় ৬০৭ জন গুম হয়ে গেছে। আমরা দেখছি যে, আমাদের প্রায় সহাস্রাধিক রাজনৈতিক কর্মী তারা নিহত হয়েছেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে। একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বিএনপি তারা ৩৫ লক্ষ মানুষের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। আপনি যে ঢাকা কোর্টে যান, জেলা আদালতগুলোতে যান দেখবেন দেখবেন যে, যারা আসামী হয়ে আসছেন তাদের বেশির ভাগই ৯০% বিএনপির নেতা-কর্মী।”
দেশের বিচার বিভাগ ও প্রশাসন দলীয়করণের অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর বলেন, ‘‘আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, বিচার বিভাগের ওপর এদেশের মানুষ কোনো আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ বিচার বিভাগের কাছে মানুষ কোনো বিচার পাচ্ছে না।”
‘‘প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে, গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়েছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই আজকে যারা গণমাধ্যম কর্মী আছেন তারা সবচেয়ে সহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটির এ্যাক্টের মাধ্যমে এখন কথা বলার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেছেন, আমি আগে একটা বাক্য খুব দ্রুত লিখতে পারতাম। কিন্তু একটা বাক্য লিখতে ৭দিন সময় লাগে। বার বার চিন্তা করতে হয় যে, আমি যে বাক্যটা লিখবো, যে শব্দগুলো লিখবো এর একবারের জন্য বিপদ নাকী ডেকে আনে। আমাদের মূলকথা আমাদের গণতন্ত্র সম্পূর্ণ ভাবে হরণ করা হয়েছে।”
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ‘জাতীয় ঐক্য’ সৃষ্টি করার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
অনুষ্ঠানে ইংরেজীতে লেখা ‘Disenfrenchenchisment under the authorian regime’ শীর্ষক গ্রন্থটি প্রকাশ করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা চিত্র তুলে ধরা হয় এই গ্রন্থে।