‘দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে’
দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি সংগঠন। এ পরিস্থিতির উন্নতিকরণ, অসমতা দূরীকরণসহ মানবাধিকার মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানিয়েছে তারা। সেইসঙ্গে শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতকরণ, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কর্মের বৈষম্য দূরীকরণের দাবি জানায় সংগঠনগুলো।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো কমার বদলে প্রতিনিয়ত আরও তীব্রতর হচ্ছে। অপরাধ ও অপরাধীদের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে বৈষম্য। আদালতে মামলার জটলা বাড়ছে, বিচারহীনতা ও বিচারপ্রার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব প্রকটভাবে লক্ষণীয়।
বক্তারা আরও বলেন, একটি দেশে মানবাধিকার থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে। এখনও আমাদের দেশে পুরোপুরি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি। তাই বক্তারা দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানান।
কর্মের সমান মর্যাদার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে পেনশন ব্যবস্থা শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ দেশের মোট শ্রমশক্তির মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিজীবী। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় ২৩টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৭টি খাতে ১৪৮টি কার্যক্রমে নানাভাবে অর্থসহায়তা করা হয়ে থাকে। দেশে বর্তমানে ৬০ বছর বা তদূধ্র্ব বয়সী জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ। সরকারি বাজেটের সামাজিক নিরাপত্তায় এ বরাদ্দ ৩১ শতাংশ। ফলে যারা দরিদ্র নয় বা উচ্চবিত্ত, তাদের কল্যাণ ও আয় সহায়তায় ব্যয় করা কতটুকু যুক্তিসংগত। যেখানে দেশের মোট শ্রমশক্তির ৯৫ শতাংশের জন্য কর্মজীবন শেষে কোনো পেনশন ব্যবস্থা নেই।
শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করতে হামলা নির্যাতনের পাশাপাশি গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা, হয়রানি বা চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। শ্রমিকদের প্রতি অনাস্থা নয় বরং আস্থা নিয়েই শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ সম্ভব। শুধু উপযুক্ত পদক্ষেপই মানবাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং সম্পূর্ণ উত্তরণকে নিশ্চিত করতে পারে। যা সর্বোপরি আরও উন্নত, স্বাভাবিক, ন্যায্য এবং টেকসই বিশ্ব গড়ায় ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশে নারী-শিশু নির্যাতন বেড়েছে দাবি করে বক্তারা বলেন, মানুষের মৌলিক পাঁচটি অধিকার- অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ সামাজিক নিরাত্তা মানুষের জন্মগত অধিকার। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নারী ও শিশু ধর্ষণের মাত্রা বেড়েছে। এর প্রতিকারে সকল শ্রেণীর, দল, মত, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আজ মানববন্ধন করে- বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন, বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রোটেকশন অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক, ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল, জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটি, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস জার্নালিস্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ মানবাধিকার কল্যাণ ট্রাস্ট, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, প্রিজারভেশন অব বাংলাদেশ ওম্যান অ্যান্ড চিলড্রেন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এবং সচেতন হিজড়া অধিকার সংঘ।