শহীদ মিনারে সড়কে স্বজনহারাদের সমাবেশ, বিচারসহ ৯ দাবি

0

সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর বিচার, ক্ষতিপূরণ ও ৯ দফা দাবিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে ‘সড়কে স্বজনহারাদের সমাবেশ’ শীর্ষক সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাড়াও সড়কে প্রাণ হারানো শিক্ষার্থীদের মা-বাবাসহ অন্যান্য স্বজনরা বক্তব্য দেন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে একপর্যায়ে নিহত শিক্ষার্থীদের স্বজনদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। তাদের দাবি, ছেলে মারা গেলেও বিচার কিংবা ক্ষতিপূরণ কোনোটিই পাননি তারা।

সড়কে প্রাণ হারানো সাইফুল ইসলামের বাবা শাহজাহান কবির বলেন, দুই বছর আগে আমার একমাত্র ছেলেকে আমি হারিয়েছি। এখন পর্যন্ত তার বিচার পাইনি কিন্তু সেই ড্রাইভার এখন ঠিকই গাড়ি চালাচ্ছে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সব দপ্তরে গিয়েছি কিন্তু বিচার পাইনি এবং কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ পাইনি।

এসময় বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাইফুল ইসলামের মা। তিনি বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

সাইফুল ইসলামের বোন বলেন, ‘আমার ভাইসহ সড়কে প্রাণ হারানো সবার মৃত্যুতে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি এবং আর কারও ভাই-ছেলে-মেয়ে যেন সড়কে প্রাণ না হারায় সেই নিশ্চয়তা চাই।’

আন্দোলনের সমন্বয়ক মঈদুল ইসলাম দাউদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এখনো সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। বরং মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

jagonews24

সমাবেশ থেকে আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে সব পরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফপাস কার্যকরসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে নয় দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো বাস্তবায়ন না হলে ১৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ের সামনেসহ সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি হলো-

>> দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শিক্ষার্থীসহ সব সড়ক হত্যার বিচার করতে হবে ও পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে;
>> ঢাকাসহ সারাদেশে সব গণপরিবহনে (সড়ক, নৌ, রেল ও মেট্রোরেল) শিক্ষার্থীদের হাফপাস নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে;
>> গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জনসাধারণের চলাচলের জন্য যথাস্থানে ফুটপাত, ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে;

>> সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সব যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে;
>> পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং স্পেস নির্মাণ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে (এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে);
>> দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ও যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা মহলকে নিতে হবে;

>> বৈধ ও অবৈধ যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনতে হবে এবং বিআরটিএ’র সব কার্যক্রমের ওপর নজরদারি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে;
>> আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঢাকাসহ সারাদেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অবিলম্বে স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিকায়ন এবং পরিকল্পিত নগরায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং;
>> ট্রাফিক আইনের প্রতি জনসচেতনতা বাড়াতে একে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে হবে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৩৭ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে মারা গেছেন ৫৪ জন শিক্ষার্থী।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com