খালেদা জিয়াও বর্তমানে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন: মির্জা ফখরুল
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও বর্তমানে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশানের হোটেল লেকশোরে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘Disenfranchisement Under the Authoritarian Regime’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এ অনুষ্ঠানে বিগত কয়েক বছরের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা কাণ্ডের শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যরা আসেন। তারা তাদের দুর্বিসহ জীবনের কথা তুলে ধরেন।
এসময় লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক, স্বাধীনতা-সার্বেভৌমত্বে প্রতীক তিনিও আজকে তার মানবাধিকার, ন্যূনতম যে অধিকার, তার চিকিৎসার অধিকার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আজকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না, তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে দেশের নির্বাসিত অবস্থা রেখে দেয়া হয়েছে।
গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের বেদনার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে এখানে আপনারা গুম হওয়া পরিবারের কথা শুনেছেন। গত ৮ বছর ধরে আমরা এই পরিবারগুলোর কান্না শুনেছি, আমরা শিশুদের কান্না শুনেছি। এখনো তাদের শিশুরা অপেক্ষা করে থাকে কখন তার বাবা ফিরে আসবে। এরকম একটা ভয়াবহ মর্মস্পর্শী পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। বাংলাদেশে আমরা যারা আছি আমাদের বার বার একথা বলার আর প্রয়োজন নেই যে, বাংলাদেশে কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পরস্পরের পরিপূরক। গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার কোনোদিন রক্ষা হতে পারে না, আর মানবাধিকার ছাড়া কখনো গণতন্ত্র চলতে পারবে না। আজকে আমরা যদি দেখি কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের এখানে যে মানবাধিকার ও হিউম্যান রাইটস বডিগুলো আছে তাদের যে হিসাব সেই হিসাবে দেখছি, প্রায় ৬০৭ জন গুম হয়ে গেছে। আমরা দেখছি যে, আমাদের প্রায় সহস্রাধিক রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। ঢাকা কোর্টে, জেলা আদালতগুলোতে গেলে দেখা যাবে যারা আসামি হয়ে আসছেন তাদের বেশিরভাগই- ৯০% বিএনপির নেতাকর্মী।
দেশের বিচার বিভাগ ও প্রশাসন দলীয়করণের অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর বলেন, আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে বিচার বিভাগের ওপর এদেশের মানুষ কোনো আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ বিচার বিভাগের কাছে মানুষ কোনো বিচার পাচ্ছে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে, গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়েছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই আজকে যারা গণমাধ্যম কর্মী আছেন তারা সবচেয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটির অ্যাক্টের মাধ্যমে এখন কথা বলার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেছেন, আমি আগে একটা বাক্য খুব দ্রুত লিখতে পারতাম। কিন্তু একটা বাক্য লিখতে সাতদিন সময় লাগে। বার বার চিন্তা করতে হয় যে, আমি যে বাক্যটা লিখবো, যে শব্দগুলো লিখবো এর একবারের জন্য বিপদ নাকি ডেকে আনে। আমাদের মূলকথা আমাদের গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে হরণ করা হয়েছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ‘জাতীয় ঐক্য’ সৃষ্টি করার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট মো: আসাদুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে ‘গুম’ হওয়া সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস, বিএনপির সাজেদুল ইসলাম সুমনের ভাগ্নি আফরা আনজুম, ওমর ফারুকের স্ত্রী পারভীন আখতার, ছাত্রদলের মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আখতার তাদের স্বজনদের সন্ধান চেয়ে আবেগময় বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে জাতিসঙ্ঘ, কানাডা, ডেমোক্রেসি ইন্টান্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল ডেমোক্রেসির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এই সেমিনারে গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, শওকত মাহমুদ, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, এম এ কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুবু উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, শ্যামা ওবায়েদ, আবদুল মালেক রতন, শিরিন সুলতানা, জহির উদ্দিন স্বপন, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, তাবিথ আউয়াল, জিয়াউদ্দিন জিয়া, জাহেদুল আলম হিটু, ফরিদা ইয়াসমীন, আতিকুর রহমান রুম্মন, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, রুমিন ফারহানা, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।