“মানবাধিকার দিবস” এর এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে “সমতা-বৈষম্য হ্রাস করে, মানবাধিকারের অগ্রগতি”
মানবাধিকার বলতে আমরা সাধারণ অর্থে বুঝি, মানুষের সে সকল অধিকার ও স্বাধীনতাকে যে অধিকারগুলো নারী, পুরুষ, শ্রেণী, ভাষা, জাতী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যে কোনো মানুষ তার জন্য জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমানভাবে উপভোগ করতে পারে। যে অধিকারগুলো থেকে কাউকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ থাকবে না।
মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৩০টি ধারার মধ্যে প্রথম ১, ২ ও ৩ নম্বর ধারা দেখলেই একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যায় এই সম্পর্কে।
ধারা ১- সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে, সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিৎ।
ধারা ২- এ ঘোষণায় উল্লেখিত স্বাধীনতা এবং অধিকারসমূহে গোত্র, ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষা, ভাষা, রাজনৈতিক বা অন্যবিধ মতামত, জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি, জন্ম, সম্পত্তি বা অন্য কোন মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই সমান অধিকার থাকবে। কোন দেশ বা ভূখণ্ডের রাজনৈতিক, সীমানাগত বা আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে তার কোন অধিবাসীর প্রতি কোনরূপ বৈষম্য করা হবে না, সে দেশ বা ভূখণ্ড স্বাধীনই হোক, হোক অছিভূক্ত, অস্বায়ত্বশাসিত কিংবা সার্বভৌমত্বের অন্য কোন সীমাবদ্ধতায় বিরাজমান।
ধারা ৩- জীবন, স্বাধীনতা এবং দৈহিক নিরাপত্তার অধিকার প্রত্যেকের আছে। সার্বজনীন মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষরিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই সনদের অভিভুক্ত ধারাগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আসছে। শুধু তাই নয়, মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সেটি সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের (২৬-৪৭ক) নং অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত আছে।
আরও সহজ করে যদি বলি তাহলে বলবো যে, মানুষের জীবন, অধিকার, সমতা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সুযোগ সুবিধাগুলিই মানবাধিকার। মানবাধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার। যে অধিকারগুলি কেউ কখনো কারো কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে না।
কিন্তু মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যা সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের (২৬-৪৭ক) নং অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত রয়েছে, আসলে সে অধিকারের বিষয়টি কতটুকু নিশ্চিত করতে পারছি? আর কতটুকুই বা সুফল পাচ্ছি? আজ দেশের মানুষ কতটুকু পাচ্ছে বাঁচার স্বাধীনতা? জীবন ধারণের স্বাধীনতা? কাজের স্বাধীনতা? মত প্রকাশের স্বাধীনতা?
কতটুকু পাচ্ছে সমান সুযোগের অধিকার? যার যা ধর্ম পালনের অধিকার? এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধ, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা থেকে মুক্তি কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে? সঙ্গে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এই অধিকারগুলোও কি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছে?
আজ এমন এক বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ রাতে ঘুমানোর সুনিশ্চিত স্থান নেই, খাওয়া পড়ার নিশ্চয়তা নেই আর নারী নির্যাতনের কথা তো বলাই বাহুল্য। সকালের পত্রিকা খুললেই দেখা যায় ধর্ষণ-নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। কেড়ে নেয়া হয়েছে জনঅধিকার, গণঅধিকার, ভোটাধিকার, ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক কোনো অধিকার আজ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত নেই। কারণ আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য ও অবৈধ ক্ষমতার দাপট প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের মানুষকে তাদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে, এবং ক্ষমতাকে দীর্ঘায়ু করতে জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে।
আজ দেশের মজলুম মানুষের আহাজারি শুনতে শুনতে বাংলার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে, তাই আজ মজলুম মানুষ তাদের মুক্তির জন্য গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের মতো নেতা চায় এবং দেশের নেতৃত্বে চায়। তারা বাঁচতে চায় সুন্দরভাবে। তারা তাদের বাড়িভিটা ফেরত চায়। তাদের ইজ্জত সভ্রম রাষ্ট্রীয় নাগরিক অধিকার নিয়ে জীবনযাপন করতে চায়। তাই আসুন লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকার মালিক বঞ্চিত হওয়া বাংলাদেশের জনগণকে তাদের মানবাধিকার ফিরিয়ে দেয়া সহ তাদের সকল কাঙ্খিত প্রত্যাশা পূরণে অহেতুক তর্কে না জড়িয়ে দলমত নির্বিশেষে যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি গণআন্দোলন গড়ে তুলি। এবং জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন বাংলাদেশের সব প্রান্ত থেকে নিশ্চিহ্ন করি। জনগণের অধিকার, মজলুমের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করি।
পরিশেষে শুধু বলতে চাই, মানবাধিকার দিবসের আজকের এইদিনে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশাই হোক আমাদের সবার অঙ্গীকার।
-ডালিয়া লাকুরিয়া