বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা বলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে নির্মম নির্যাতনে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায়ে সবার আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি। আবরারের পরিবারের সাথে একাত্মতা পোষণ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের দাবি থাকবে, এ রায় যেন শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে তিন জন (এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুজতবা রাফিদ, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান) এখনও পলাতক। আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, পলাতক তিনজনকে দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় এনে রায় কার্যকর করা হোক। আমাদের প্রত্যাশা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক কাউকেই যেন রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বলি না হতে হয় এবং সব ক্ষেত্রে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে।
এ ছাড়া এ রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রায় ঘোষণার পর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদকিদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘এটা প্রতীক্ষিত রায় ছিল। আবরার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হয়েছে। এখন আমাদের দাবি হচ্ছে, এ রায় দ্রুত ও স্বল্প সময়ের মধ্যে কার্যকর করা হোক।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে ভিসি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে ভবিষ্যতে এরকম কর্মকাণ্ড যদি কেউ করেন তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে।
সত্য প্রসাদ আরো বলেন, আবরারের পরিবারের প্রতি আমরা যথেষ্ট সহমর্মিতা দেখিয়ে আসছি। আমরা তাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করে আসছি। মামলার সব খরচ বুয়েট প্রশাসন থেকে বহন করা হচ্ছে। আবরারের পরিবার চাইলে আমাদের এ সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের উপস্থিতিতে আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর পাশাপাশি যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ আসামি হলেন—বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ছাত্রলীগকর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
এ ছাড়া বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, ছাত্রলীগকর্মী আকাশ হোসেন এবং মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।