তোফায়েল আহমেদ

0

তোফায়েল আহমেদ
পিতা: মৃত মৌলভী আজাহার আলী
মাতা: ফাতেমা খানম
ঠিকানা: গ্রাম-কোড়ালিয়া, ইউনিয়ন-দক্ষিণ দিঘলদী
জন্ম: ২২/১০/১৯৪৩

নিম্ন মধ্য বিত্ত কৃষক এক মৌলবী পরিবারের সন্তান হয়ে গেলেন হাজার কোটি টাকার মালিক। জীবনে কোন চাকুরী করেন নাই। আয়ের উৎস কি ?

মেধাবী ছাত্র আব্দুল মালেক হত্যার মূল আসামি। ইনু মেনন এবং তোফায়েলের নেতৃত্বে। সিরাজি সিকদার খুনের মামলার তালিকাভুক্ত আসামি তোফায়েল।

১৯৬৯ সালের ২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন (নিপা) ভবনে (বর্তমান ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) এ ‘শিক্ষার আদর্শিক ভিত্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা সভায় বামপন্থীদের বিরোধীতামূলক বক্তব্যের মধ্যে শহীদ আব্দুল মালেক মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। অসাধারণ মেধাবী বাগ্মী শহীদ আব্দুল মালেকের সেই ৫ মিনিটের যৌক্তিক বক্তব্য উপস্থিত সবার চিন্তার রাজ্যে এক বিপ্লবী ঝড় সৃষ্টি করে। ফলে সভার মোটিভ পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায়। জাতীর শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তির বিষয়ে তিনি সে দিন স্পষ্ট করে বলেছিলেন- “Pakistan must aim at ideological unity, not at ideological vacuum- it must impart a unique and integrated system of education which can impart a common set of cultural values based on the precepts of Islam. We need Common set of cultural values, not one set of cultural values-

তার বক্তব্যের এ ধারণাটিকে তিনি যুক্তি সহকারে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। উপস্থিত শ্রোতা, সুধীমণ্ডলী এবং নীতি নির্ধারকরা শহীদ আব্দুল মালেকের বক্তব্যের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে একটি সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। আব্দুল মালেকের ত্বত্ত্ব ও যুক্তিপূর্ণ অথচ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ক্ষিপ্ত করে দেয় ইতোপূর্বে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে বক্তব্য রাখা বাম, ধর্মনিরপেক্ষ ও ইসলাম বিরোধী বক্তাদের। সকল বক্তার বক্তব্যের মাঝ থেকে নীতি নির্ধারক এবং উপস্থিত শ্রোতা-সুধীমণ্ডলী যখন আবদুল মালেকের বক্তব্যকে পুর্ণ সাপোর্ট দেয় তখন আদর্শের লড়াইয়ে পরাজিত বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়ে শহীদ আব্দুল মালেকের উপর। নিপার আলোচনা সভায় ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে জনমত তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ডাকসু-র নামে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার পক্ষে প্রস্তাব পাশ করানোর উদ্দেশ্যে দশ দিনের ব্যবধানে অর্থাৎ ১২ আগস্ট ঢাবির ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।

ছাত্রদের পক্ষ থেকে শহীদ আব্দুল মালেকসহ কয়েকজন ইসলামী শিক্ষার উপর কথা বলতে চাইলে তাদের সুযোগ দেয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। সভার এক পর্যায়ে জনৈক ছাত্র নেতা ইসলামী শিক্ষার প্রতি কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখে। তখন উপস্থিত শ্রোতারা এর তীব্র বিরোধীতা করে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে শ্লোগান দেয়। সাথে সাথে রওনক , মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম , ইনু মেনন তোফায়েল ক্যাডাররা ঝাপিয়ে পড়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর। সন্ত্রাসীদের ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শহীদ আব্দুল মালেক তার সঙ্গীদের স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন। এ সময় সকল সঙ্গীকে নিরাপদে বিদায় দিয়ে শহীদ আব্দুল মালেক কয়েকজন সাথীকে সাথে নিয়ে টিএসসির পাশ দিয়ে তার হলে ফিরছিলেন।

হলে ফেরার পথে লোহার রড-হকিস্টিক নিয়ে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাকে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নিয়ে মাথার নিচে ইট দিয়ে, ইটের উপর মাথা রেখে ইট ও লোহার রড- হকিস্টিক দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে রক্তাক্ত ও অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়।

শহীদ আব্দুল মালেককে আহত এবং সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার তিনদিন পর ১৫ আগস্ট শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তিপুর্ণ বক্তব্য দেয়া ইসলামের এই সুমহান বক্তা। ১৯৬৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিরবিদায় নেন।অবস্থা বেগতিক দেখে সেই সময় শেখ মুজিব নিজেই দায়সারা একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন , যে এখন ছাত্রলীগের খুনিদের যেমন দায়ভার এড়িয়ে আওয়ামীলীগ বিবৃতি দেয়।

চর দখলের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা তোফায়েল রাজধানীতে এসে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান। আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা তখন কিছু বডিগার্ড লালন পালন করতেন। সেই সুযোগ ব্যবহার করে তোফায়েল হয়ে যান নেতাদের বডিগার্ড।

১৯৬৬-৬৭ সালে ইকবাল হল ছাত্র সংসদে থাকাকালীন সময়ে রাজধানীতে ভাড়া খুনি হিসাবে টাকার বিনিময়ে খুন করতেন তোফায়েল। সন্ত্রাসী বাহিনীর ডগফাদার রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

এর ফলে ১৯৬৭-৬৯ সাল পর্যন্ত সরাসরি ঢাকসুর পরিচয় ব্যবহার করে তৎকালীন হাবিব ব্যংক , কাহিনীর কোম্পানি , ডন ইন্সুরেন্স থেকে মাসিক বড় অংকে চাঁদাবাজি আয়ের উৎস হয়ে উঠে। সম্পূর্ণ নিম্নশ্রেণীর একগাম থেকে উঠে আসা দরিদ্র পরিবারের সন্তান তোফায়েল আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের বডিগার্ড ও ফরমায়েশি খুনি হয়ে নিজেকে দলীয় নেতাদের কাছে পরিচিত করার ফলেই ১৯৭০ সনের জাতীয় নির্বাচনে শেখ মুজিবের নির্দেশে মনোনয়ন দেন।

তোফায়েল আহমেদ ১৯৭১ সালে ও পরবর্তীতে মানবতা বিরোধী অপরাধের সরাসরি জাতির ছিলেন।

ভারতে অবস্থান কালীন সময়ে কিশোরীদের ভালো চাকুরী দেয়ার লোভ দেখিয়ে হোটেলে নিয়ে অনৈতিক কাজ করার জন্য তোফায়েল গং দের অনৈতিক অপরাধের বিষয়ে তৎকালীন লেখক আহমেদ ছফা , জহির রাহয়হান , সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল , আফতাব আহমেদ , এম আর আখতার মুকুল , সর্বশেষ তাজ উদ্দিন আহমেদের মেয়ের লেখা বইয়ে মুজিব বাহিনী বিএলএফ নেতাদের কর্মকান্ড উল্লেখ আছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে মুজিব বাহিনীর চার প্রধানের তিনি ছিলেন একজন। মুজিব বাহিনী ভারতে অবস্থান নিয়ে মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীর বিরোধিতা করে। এমনকি মুজিব বাহিনীর অস্থায়ী সরকারের কোন কিছুই শিকার করতো না। সেই সময় চোরাগুপ্তা হামলা করে বহু মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে মুজিব বাহিনী।

১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি শেখ মুজিব একজন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তাকে তার রাজনৈতিক সচিব নিযুক্ত করেন। ১৯৭৩ সালে ভোলায় নারকীয় তান্ডব চালিয়ে রাজধানী থেকে খুনিদের প্রতিটি কেন্দ্রে পাহারায় রেখে সকল কেন্দ্র দখল করে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।জাতীয় বেঈমানের ১৯৮৬ নির্বাচন , ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে পর পর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। । তিনি সর্বশেষ ২০০৮ সালে ভোলা ২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর অনির্বাচিত আটো এমপি।

একসময় প্রতিদিন সন্ধ্যায় শেখ মনি, তোফায়েল , আমু , নাসিম গংদের কাছে সারাদিনের চাঁদাবাজির খুনের সব বিবরণ দিতে বাধ্য থাকতো আওয়ামীলীগের সকল অঙ্গসংগঠনের খুনি সন্ত্রাসীরা। এরপর গভীর রাতে ভাগবাটোয়ারা হতো ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে শেখ জামাল কামালের উপস্থিতিতে। শেখ মুজিবের আয়ের ব্যাংক বলা হতো এদের। কিছুদিন পর পর শেখ মুজিবের স্ত্রী বড় বড় ট্রাঙ্কে করে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যংকের গভর্ণরের উপস্থিতিতে রাতের বেলায় টাকা গুলো পাচার হতো ৩২ নম্বর ধানমন্ডি থেকে বাংলাদেশ ব্যংকে চরম গোপনে । সেই টাকা পাচারে ব্যবহার করা হতো বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীর ট্রাক।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সচিব , এমপি , রক্ষীবাহিনীর কমান্ডার পদ ব্যবহার করে রাজধানীতে গণহারে ডাকাতি , জোরদখল এবং সীমান্তে পাচারের সিন্ডিকেট তৈরী করে কয়েকমাসেই হয় যান তৎকালীন কয়েক কোটি টাকার মালিক। রাজধানীতে বিশাল সম্পদ , ভোলা জেলায় নিজ এলাকা এবং সদরে শহরের ভেতর ও বাহিরে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ বিঘা জমির অবৈধ মালিক।

নিজের নামে ও শশুর বাড়ির আত্বীয়দের নামে রাজধানীতে সরেজিমিনে পাওয়া ২৮ টি ফ্ল্যাটের মালিক। জীবনে কোনদিন চাকুরী করেন নাই। শেয়ার বাজারের প্রায় ৮৯ কোটি টাকার শেযার আছে ভিবিন্ন নামে। ভোলা জেলায় নিজস্ব খুনি বাহিনী লালন পালনের জন্য মাসিক দেড় কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেন তোফায়েল।

রক্ষীবাহিনীর সিরিয়াল কসাই হিসাবে নিজেই ছিলেন আওয়মীলীগের এক দানব। তোফায়েল নিজেই এবং তার নির্শেদে মেধাবী তরুণ , ছাত্র , ইসলামী চিন্তাধারার তরুণ , রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা , বাম রাজনীতির ও সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির কয়েকহাজার মানুষকে হত্যা করে রক্ষীবাহিনী।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com