খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিদেশে চিকিৎসা ও বিএনপির আন্দোলন নিয়ে যা বললেন আব্বাস-গয়েশ্বর

0

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস মনে করেন, তার দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে আন্দোলন দুর্বার হয়ে উঠেছে। সরকার তা সহ্য করতে পারছে না। আর এ কারণে ‘ইস্যু অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে, দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে’ জিয়াউর রহমানের পরিবার নিয়ে কথা বলছে।

গতকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে দলের অনুসারী উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের দৃষ্টিটাকে, মুখের কথাবার্তাকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়। আমাদের দৃষ্টি একটাই দেশনেত্রীর সুচিকিৎসা, দেশনেত্রীর মুক্তি। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবে।’

দলের স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, ‘এই নেত্রী দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন, বেগম জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন, দেশের উন্নয়নে কাজ করেছেন, মানুষের কথা বলার অধিকার দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা তার কল্যাণে মন্ত্রী-এমপি হয়েছি। তার নাম নিয়ে, তার দলের পতাকা নিয়ে আমরা নির্বাচনে পাস করেছি। এবার আমাদের দেওয়ার পালা, নেওয়ার নয়। তাকে এখন দেওয়ার চেষ্টা করবো।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশনেত্রীর হাতে কতদিন সময় আছে, আমি জানি না। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছেন, আপনারা শুনেছেন। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি দুই-তিন দিন, হাতের ইশারায় কথা হয়েছে। ভালো অবস্থায় নেই তিনি।’

মির্জা আব্বাস জানান, তিনি গত কয়েকদিন আগে বরিশাল, ফরিদপুর জেলায় সফরে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি- কী আওয়ামী লীগ, কী বিএনপি— সকলেরই এক কথা। কেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না, কেন তাকে তিলেতিলে মেরে ফেলা হচ্ছে?’

তিনি বলেন, ‘আমরা একের পর এক কথা বলে জনমত সৃষ্টি করছি। জনমত এগিয়ে আসছে।’

মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, সরকার চায় বিএনপির ওপর অত্যাচার করতে হবে, বিএনপিকে ধ্বংস করতে হবে। সুতরাং তারা মনে করে, একমাত্র খালেদা জিয়াকে ধ্বংস করতে পারলেই বিএনপি ধ্বংস হবে। জিয়ার পরিবার নিয়ে, খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি শিশু বাচ্চাকে নিয়ে কথা বলছে এই সরকারের মন্ত্রীরা।

তিনি বলেন, ‘রাস্তা থেকে ধরে এনে মন্ত্রী বানিয়ে দেবেন, দেশের লোকেরা মান্য করবে, এটা ভাবার দরকার নাই। আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার সুসন্তান। এই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যারা মুমুর্ষূ মানুষকে নিয়ে কথা বলেন তারা কখনোই সভ্য মায়ের সভ্য সন্তান নয়।’

এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার বক্তৃতায় বলেন, ‘আর কথা নয়; এখন থেকে শুধু অ্যাকশন, মধ্যরাতের সরকারের বিরুদ্ধে অ্যাকশন। সারাদেশ, গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর সব জায়গায় একটি সুর, ‘শেখ হাসিনার সরকার ভোট চোর’। এ ভোট চোরের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই-এর নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি।’

সাবেক এ জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, এখনও আপনাদের নেতৃত্বে এলাকার মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে। এসব মানুষদের নিয়ে আপনারা আরো ঐক্যবদ্ধ হন। আমরা আবারো ‘৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করব। মিডনাইট এ সরকারকে বিদায় করব, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, দেশবাসীকে মুক্ত করব।

বিএনপির এ নেতা বলেন, উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। মুসলিম বিশ্বের প্রথম নির্বাচিত মহিলা প্রধানমন্ত্রী, একবার নয় তিন বার। তিনি আলাদা আলাদাভাবে ২৩ টি আসনে নির্বাচন করে প্রতিটি আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন। সেই নেত্রী সম্পর্কে (ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি ও নেতা) যে ধরনের ঠাট্টা মশকরা করা হয়-এটা সৃষ্টাচারের সাথে তুলনা করা যায় না-এরা বেয়াদব। এদের জবাব মুখ দেয়া যায় না।

তিনি আরো বলেন, আপনারা আপনাদের সাহসকে আরো প্রত্যয়ী করেন, নেতাকর্মীদের সাথে আরো ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলুন। এটাই হবে আমাদের আন্দোলনের সফলতার মূলমন্ত্র।

ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। জনবিচ্ছিন্ন এ সরকার যদি আমাদের কন্ঠরোধ করে, আমাদের আন্দোলনকে স্তব্দ করে তাহলে আমাদের জন্মই বৃথা। আমাদের জন্ম হয়েছে সংগ্রামের জন্য। আমরা বিএনপি করি তার যে নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, আমরা আপসহীন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার অনুসারী এসব কারণে আমরা ব্যর্থ হতে পারি না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছেন, সেখান থেকে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুধুমাত্র আমাদের ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সফল আন্দোলনের মধ্যদিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরবে, খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন এবং উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ যেতে পারবেন।

বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা জিয়াউর রহমানের সৈনিক, খালেদা জিয়ার সৈনিক ও তারেক রহমানের সৈনিক। আমাদের আলাদা পরিচয় নেই; সৈনিকদের কাজ হচ্ছে লড়াই করা। আজকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান,তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ মুক্ত হবে এবং মুক্ত হবে গণতন্ত্র।

গয়েশ্বর বলেন, আমাদের নেত্রী আজ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। তার সাথে সাক্ষাত করতে পারি না। চিকিৎসকদের কথা সরকার কানে নেয় না, তারা আইনের ছবক দেয়। আবার বলে, তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে এ সময়ে কোন লোকটা নিষ্পাপ আছে, যার কাছে খালেদা জিয়া ক্ষমা চাইবে। খালেদা জিয়া এমন কী অন্যায় করেছে, যার জন্য ক্ষমা চাইবে? টাকা তছরুপ হয়নি, বরং বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। তারপরও তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অথচ হাজার হাজার, লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com