আজ স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস
আজ সোমবার, (৬ নভেম্বর) স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস। ১৯৯০-এর এই দিনে দীর্ঘ নয় বছরের অবিরাম রক্তস্নাত গণআন্দোলনের ফলে পতন ঘটেছিল স্বৈরাচার এরশাদের অবৈধ শাসনের। এই দিনটি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এদিন তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ আন্দোলনে প্রাণ হারান জেহাদ, নূর হোসেন, সেলিম, দেলোয়ার, তাজুল, ডা. মিলন, নূরুল হুদা, বাবুল, ফাত্তাহসহ অনেকে। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন অগণিত গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ। স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে এক সোনালী সম্ভাবনাময় ভোরের উদয় ঘটে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
মার্চ ২৪, ১৯৮২, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ।
গণতন্ত্রকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে প্রথম থেকেই বিরোধীতা করেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮৩ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে সাত দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পনেরো দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচির সূত্রপাত করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু মার্চ ২১, ১৯৮৬ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া ‘এরশাদ হটাও’ শীর্ষক এক দফার আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। তারপর পুনরায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপক্রম হয়।
বেগম খালেদা জিয়া রাজপথে ও সারাদেশে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। প্রথম থেকে শুরু করে স্বৈরাচার এরশাদের পতন পর্যন্ত রাজপথে অনড় অবস্থা গ্রহণ করেন তিনি। তাঁর এই বলিষ্ঠ ও ইস্পাত কঠিন নেতৃত্বের ফলে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তাঁর ক্যারিশমা। জনগন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তাঁকে ‘আপসহীন নেত্রীর’ উপাধি দেন। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সকল দলমত এক দফার আন্দোলন চালিয়ে যায়। পতন ঘটে এরশাদ শাহীর।
তিন দশক পরে এসে বেগম খালেদা জিয়াকে জনগণ ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ অভিধায় অভিসিক্ত করেছেন। বর্তমানের তিনি লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনের জন্য লড়ছেন। তাঁর মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে কোটি কোটি জনতা রাজপথে প্রহর গুনছেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন।