সড়কের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাল কার্ড হাতে রামপুরার সড়কে শিক্ষার্থীরা
সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাফপাস কার্যকর ও নিরাপদ সড়ক দাবিতে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। এবার সড়কের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাল কার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে খিলগাঁও মডেল কলেজের ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী রামপুরা ব্রিজের হাতিরঝিল থানা অংশে লাল কার্ড নিয়ে আন্দোলন করছেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ না হলেও প্রগতি সরণির এক পাশে যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পক্ষে নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ২৯ নভেম্বর (সোমবার) রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় গ্রিন অনাবিল পরিবহনের বাসের চাপায় মাইনুদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ঘটনায় রাতে সড়ক অবরোধ করে উত্তেজিত জনতা। এ সময় ঘাতক বাসসহ আটটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় আরও চারটি বাস।
এ ঘটনায় বাসচালক সোহেলকে (৩৫) গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। আহত সোহেলের পুলিশি পাহারায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে ঘাতক বাসের হেলপারকেও আটক করেছে র্যাব। ওইদিন সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে সরব হন।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের মানবিক শাখার দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান (১৭) নিহত হয়। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে নেমে আসেন।
এর আগে শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নিরাপদ সড়ক দাবিতে রামপুরা ব্রিজের ওপর আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা কর্মসূচিতে তাদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
উল্লেখ, গত বুধবার রামপুরা ব্রিজের আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো─
১. সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাঈনউদ্দিনের হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
২. সারাদেশে সকল গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সকল রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. গণপরিবহনে ছাত্রছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. সকল রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সকল পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।
৭. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকিট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে ২ জন চালক ও ২ জন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১০. ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারিত করে দিতে হবে।
১১. মাদকাসক্তি নিরসনে গোটা সমাজ জুড়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্টের ও কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।