ক্রমান্বয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে ঢাকা মহানগর
ক্রমান্বয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে ঢাকা মহানগর। সবখানেই অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম; জীবন যাত্রায় ব্যয় বেড়েছে। শীতের শুরুতেই হাসপাতালে সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যালার্জি, চর্ম রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা রাজধানীতে নানাবিধ দূষণ চলতে থাকলে নাগরিকরা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন
রাষ্ট্রের সবকর্মযজ্ঞ এককেন্দ্রিক হওয়ায় সারা দেশের মানুষ রাজধানী ঢাকামুখী। শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরি, কেনাকাটা সবকিছুর জন্য মানুষ ঢাকায় ছুটে আসেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া-রূপসা থেকে পাথুরিয়ায় বসবাসকারী সবার স্বপ্ন ঢাকায় গিয়ে সমস্যার সমাধান করা। অথচ কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের ঢাকা ক্রমান্বয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। মশার যন্ত্রণা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ধুলোবালু, যত্রতত্র আবর্জনা, যানজট, চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা, নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য এসব যন্ত্রণা নগরজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। বায়ুদূষণে ঢাকার নাম পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ শহরগুলোর তালিকায় উঠে গেছে। ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। নির্দেশনার প্রায় তিন বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
অপরিকল্পিত নগরায়ন হওয়ায় রাজধানী ঢাকা কার্যত মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। প্রয়োজনীয় সুবিধাদি ছাড়াই আকাশছোঁয়া বিল্ডিংয়ের পর বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে। অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে মহানগর ডুবে যায়। বসন্তে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে ধুলায় ধূসরিত হয়ে উঠে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শীত পড়তে শুরু করেছে। তীব্র বায়ুদূষণের শহর হিসেবে ঢাকা মাঝেমধ্যেই শীর্ষ অবস্থানে চলে আসছে। ঢাকা শহরে চলমান পুরোনো গাড়ি, সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, যত্রতত্র ইরামত নির্মাণ, শহরের আশপাশে ইটভাটা ও শিল্পকলকারখানার দূষণ, শহরের ভেতরে জমা ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়া বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। নগরের উন্নয়নের নামে খোঁড়খুঁড়ি, ইরামত নির্মাণে ইট-বালুর কণা পরিবেশ দূষণ করছে। আবার মশার যন্ত্রণা, যত্রতত্র ময়লার ভাগাড় পরিবেশকে দুর্গন্ধময় করে তুলছে। গত নভেম্বর মাসে বৃষ্টি তেমন হয়নি। আবহাওয়াবিদদের ধারণা ডিসেম্বরেও বৃষ্টি তেমন হবে না। এমনিতেই শীতে বিভিন্ন রোগব্যাধি বেড়ে যায়। শীতে মানুষের সাধারণ সর্দি-কাশি, অ্যাজমা বা হাঁপানি বাড়ে, ব্রঙ্কাইটিস বাড়ে, সিজন চেঞ্জের জন্য কিছু ভাইরাস জ্বর হয়ে থাকে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধবয়সিরা এসব রোগে বেশি ভোগেন। যাদের বাত ও ব্যথা জাতীয় রোগ আছে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি গিঁটে গিঁটে ব্যথা বেড়ে যায়। ঠান্ডা কারণে এ রোগগুলো বেশি দেখা যায়। টনসিল ফুলে যায়, সাইনোসাইটিজ হয়, যেটা ছোট বাচ্চাদের বেশি দেখা হয়ে থাকে। শীতকালে স্কিনের কিছু রোগ বাড়ে, অ্যালার্জি হয় এবং চামড়া শুষ্ক হয়ে যায় বলে এ রোগ বেড়ে যায়। এ ছাড়াও এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বর ও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি তো রয়েছেই। এর মধ্যেই মহানগরীর হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে এ দূষণ চলতে থাকলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন বাসিন্দারা। এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি, চর্ম রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসকষ্টের ঝুঁকিতে রয়েছেন শিশু বৃদ্ধ বয়সি লাখ লাখ মানুষ। অথচ এ দিকে দায়িত্বশীলদের ভ্রুক্ষেপ নেই।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডীন প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, শীতে যেহেতু আর্দ্রতা চেঞ্জ হয়, বাতাসে ধুলাবালু বেশি উড়ে, তাই শীতকালে ঠান্ডজনিত রোগ বেশি হয়ে থাকে। আর ঠান্ড লাগলে তো যে কারো কাশি বা অ্যাজমা হতেই পারে। ঠান্ডর কারণে শরীরের মাসলগুলো স্টিফ হয়, মাংসগুলো খিচে আসায় ব্যথাগুলো আরো বেড়ে যায়। এ জন্য নগরকে পরিচ্ছন্ন এবং ধুলাবালু মুক্ত রাখতে পারলে এসব রোগ কম হবে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। এ সময় ঢাকার আশপাশের সবগুলো ইটের ভাটা চালু থাকে। তাদের বায়ুদূষণ রোধে যে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা সেগুলো নেওয়া হয় না। এছাড়া কুয়াশার কারণে শহরের বায়ু বাইরে বের হতে পারে না। ফলে ধুলাবালু ও ক্ষতিকর পদার্থ মহানগরের মধ্যেই থাকে। শীতের এ সময়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বেশি হচ্ছে। এগুলোর প্রভাব বায়ুর ওপর পড়ছে।
হাইকোর্টের নির্দেশনা মানেনি : ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান এবং বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে অতিরিক্ত বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলজারি করেছেন। যেসব এলাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে, যেসব এলাকা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঘেরাও করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ১০ এপ্রিল পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালককে তলবও করা হয়। তারপরও বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
পরিবেশষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর বায়ুতে ৬ ধরনের পদার্থ ও গ্যাসের কারণে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা এবং দুইটি ক্ষুদ্রতিক্ষুদ্র কণা, যেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। এগুলোর উপস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই বায়ু মান যাচাই করা হয়। আর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই পদার্থগুলোই শরীরে প্রবেশ করে। ফলে শুরুতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণের মাধমে বায়ুবাহিত রোগ হতে পারে। শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ক্রনিক অ্যাজমা, ব্রংক্রাইটিস হতে পারে। অন্যদিকে দূষিত বায়ুর মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থ নাক ও মুখ দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। ফুসফুসে অক্সিজেনের মাধ্যমে সারা শরীরের রক্ত এসে পিওর হয়ে সাপ্লাই হয়। যখন আমরা অক্সিজেন নিচ্ছি তখন বায়ুর মাধ্যমে অন্যান্য ক্ষতিকর বস্তুগুলোও ফুসফুসে গিয়ে জমা হয়। ফলে ফুসফুস দুর্বল হয়ে যাবে, ইনফেকশন হতে পারে। ধীরে ধীরে এর কার্যক্ষমতা কমে যাবে, পরিণতিতে ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে।
ভয়াবহ বায়ুদূষণ : বিশ্বের যে কয়টি মহানগর বায়ুদূষণ বেশি সেগুলোর শীর্ষের তালিকায় ঢাকার নাম। বিশ্বের বিভিন্ন নগরে বায়ুর মান নিয়ে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়াল। তাদের বায়ুমান সূচকে (একিউআই) মারাত্মক বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে শহরগুলোর অন্যতম হচ্ছে- বাংলাদেশের ঢাকা, ভারতের দিল্লি, দামেস্কের সিরিয়া এবং আফগানিস্তানের কাবুল। বায়ুমান সূচকে একিউআই ১০১ থেকে ১৫০ হলে সাধারণ নগরবাসী বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। ১৫১ থেকে ২০০ হলে নগরবাসীর প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। ঢাকার এ স্কোর ৩২৯ থেকে ৫০০ মধ্যে উঠানামা করছে। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পরিবেশবিদরা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষিত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় বর্তমানে উন্নয়ন কাজ বেশি হচ্ছে। বছরজুড়ে চলছে রাস্তার উন্নয়ন কাজ, বাড়ি স্থাপন, একইসঙ্গে ঢাকা শহরের আশপাশে গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা। এসব কাজে বায়ুদূষণ রোধে প্রতিষ্ঠানগুলো যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নিচ্ছে না, একইসঙ্গে তদারককারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ‚মিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে বায়ুদূষণে শীর্ষে উঠে আসছে রাজধানী ঢাকা।
মশার যন্ত্রণা : রাজধানী ঢাকার আয়োতন ১৩৪ বর্গকিলোমিটার। অথচ মহানগরীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে মশা উৎপাত। মহানগরীতে মাত্র ৬ বর্গকিলোমিটার নালা-পুকুর রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এসবের মালিক হলে পরিষ্কার করছে না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে মশার উৎপাত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাম্প্রতিক এক জরিপে রাজধানী ঢাকার মশার প্রাদুর্ভাবের উদ্বেগজনক চিত্র উঠে আসে। জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১২ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০ শতাংশ এলাকায় এডিস লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতির চিত্র দেখা যায়। জরিপের ফলাফল তুলে ধরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেছিলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু ঢাকার দুই সিটির সে ধরনের তৎপরতায় ঘাটতি রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত¡বিদ কবিরুল বাশার অভিযোগ করে বলেন, ২০২০ সালের বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলাকালীন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। দুই সিটি কর্পোরেশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় মশার যন্ত্রণা বেড়ে গেছে।
ওই সময় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। গণমাধ্যমে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়। ঢাকার মশার ভয়াবহতা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সে সময় দুই সিটি কর্পোরেশন থেকে মশা মারার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করায় মশার উপদ্রব কিছুটা কমে আসে। তবে এখনো এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এ মশা নগরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
যানজট : যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণ হচ্ছে, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব নির্মাণ করা হলেও মহানগরীতে যানজট কমেনি বরং বেড়েছে। মতিঝিল থেকে গুলশান যেতে কয়েক বছর আগেও ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগত। এখন সময় লাগে কমবেশি দেড় ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা। গত ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উন্নয়নবিষয়ক বার্ষিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, যানজটের কারণে বছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপির ২.৫ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকা। ‘ঢাকার অসম সম্প্রসারণ ও এর পরিণতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) পরিচালক আহমেদ আহসান। তিনি বলেন, যানজটের কারণে জিডিপির ২.৫ শতাংশ ক্ষতির যে তথ্য দিয়েছেন, তাকে টাকায় রূপান্তর করা হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে সর্বশেষ জিডিপির আকার থেকে। বাংলাদেশে অন্যান্য শহরে উন্নয়নের ঘাটতি থাকায় সব কিছু এখন ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে এখানে যানজটসহ নানা অব্যবস্থাপনা আছে। ঢাকার অতিরিক্ত বৃদ্ধি সার্বিকভাবে নগর উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রতিবছর এ ক্ষতির পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে ৫.৮ শতাংশ। বাংলাদেশের যত মানুষ শহরে বাস করেন তার বেশিরভাগই থাকেন ঢাকায়। প্রধান শহরগুলোতে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১.৯ শতাংশ বসবাস করে। ঢাকায় বাস করে ১১.২ শতাংশ। ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর মাত্র ৫টি।
জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় নিয়মিত যানজটের কারণে দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। যানজটের কারণে জ্বালানি তেল, গ্যাস বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। মানুষ ধৈর্য হারাচ্ছে। এসব কিছুর একটি মূল্য আছে।
যত্রতত্র আবর্জনার ভাগাড় : ঢাকার নগরজীবন নানা সমস্যায় জর্জরিত। দিনবদলের কারণে যেখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি হওয়ার কথা; সেখানেই চলছে অনিয়মের অরাজকতা। নানা যন্ত্রণা, বঞ্চনা ও দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না। রাজধানীতে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ এবং ফেলার নির্ধারিত জায়গা ও পর্যাপ্ত আস্তাকুঁড়ের (ডাস্টবিন) অভাবে আবর্জনার স্ত‚প তৈরি হয়েছে যত্রতত্র। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এসব পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। ময়লা থেকে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নগরবাসী। জানা গেছে, দুই ডিসিসির প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। করোনা এবং শীত মৌসুমে এর পরিমাণ আরো বেড়ে যাচ্ছে।
ঢাকা টু চট্টগ্রাম সড়ককে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। অথচ গুলিস্তান মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের পূর্ব মুখেই শনির আখড়ায় মহাসড়কে বিশাল ময়লার ভাগাড় গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিন এ সড়কে যাতায়াত করেন লাখ লাখ মানুষ। দুর্গন্ধময় সড়ক দিয়েই তাদের যাতায়াত করতে হয়।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সেগুন বাগিচা, গুলশান, ফার্মগেট, মিরপুর, কলাবাগান, তেজগাঁও, মগবাজার, পল্টন, পান্থপথ ও পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিন-দুপুরে ময়লাবাহী ট্রাক বা ভ্যানে ময়লা পরিবহনের কাজ চলছে। কিন্তু নগরবাসীর দুর্ভোগের এড়াতে এসব ময়লা দিনের বেলা অপসারণ না করে রাতে করার নির্দেশনা রয়েছে। সে আদেশ সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে দিনেই বর্জ্য অপসারণের কাজ করা হচ্ছে।